Sunday, February 26, 2017

সকল ভিক্ষুক পূনর্বাসিত হোক

বহুদিন কেউ চাল ভিক্ষা চায় না। আগে আমাদের বাসায় মটকিতে চাল রাখতো। সেখানে থেকে অর্ধেক পটে করে প্রতি ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া হতো। কতো দূর দূরান্ত থেকে কতো কতো মানুষ ভিক্ষা নিতে আসতো। “মাইগো চাইল্যা ভিক্ষা দিবেন” ডাক শুনলে মায়ের আগে আমি দৌড় দিতাম। মটকি থেকে উপুর হয়ে পট ভরে চাল তুলতাম। দুপুরবেলা কেউ ভিক্ষা করতে আসলে আমার মা মাঝে মাঝে ভাত খেতে দিতেন। আমি পাশে বসে থাকতাম। কাউকে আবার কাজে লাগিয়ে দিতেন আমার মা। কাপড় ধুয়ে দাও, মশলা বেটে দাও। এটা ছিলো ভিক্ষুকদের এক্সট্রা ইনকাম। আমার বাবা ভিক্ষকদের ”তুমি” ডাকতে নিষেধ করতেন। আমার এখনো মনে আছে এক ভিক্ষুককে ”আপনি” না বলার কারণে আমি রাম থাপ্পর খেয়েছিলাম। তখন ভিক্ষুক অবশ্য অতো ছিলো না। কিছু কিছু বান্ধা (পরিচিত) ভিক্ষুক ছিলো যাদের সাথে আমার মায়ের বেশ খাতির ছিলো। তারা কুরচি (কাপড়ের থলে) ভরে ডিম বা শাক নিয়ে আসতো। মা মারা যাবার পর অনেক ভিক্ষুক এসে আমাদের বাসায় এসে কান্নাকাটি পর্যন্ত করেছে। আমি ভিক্ষুকবন্দনা লিখতে বসিনি, তবে এটা সত্য আজকাল ভিক্ষুকরা কাঁদলেও তাদের চোখে মায়া পাই না। তারা চাল চায় না টাকা চায়। টাকা না দিলে আবার গালাগালি করে। ’কাজ করে খেতে পারেন না’ বললে মুখ ভেংচি দেয়। ছোট ছোট বাচ্চারা ভিক্ষের ছুঁতোয় ছোট থেকেই ছলনা শিখছে। বড় হয়ে তারা কি হবে?
যুগ যুগ থেকে চলছে ভিক্ষা পেশা। এটা যে শুধু বাংলাদেশে আছে তা কিন্তু না, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো ভিক্ষাবৃত্তি আছে। অন্যের রোজগারে নিজে বেঁচে থাকবে এর চেয়ে আরামের জীবন কি আর আছে? একবার আমার এলাকা হবিগঞ্জের মাধবপুরের এক পরিচিতজনকে সিলেটে ভিক্ষা করতে দেখলাম। কাছে গেলাম, বললো আমাকে সে চেনে না। অথচ সেবছরই ঈদে দেখি সে সুন্দর বেশ ভূষায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। জানতে চাইলাম, কই থাকেন? সে বললো সিলেটে ছোটখাট ব্যবসা করে।
আরেকটা গল্প বলি। একবার জিন্দাবাজারের ব্যস্ত সড়কে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। এক বোরকাওয়ালী মহিলা হাউমাউ করে কেঁদে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, “বাবা আমার বাড়ি নীলফামারী, মাজারে এসে আমার স্বামী এখানে রেখে চলে গেছে। নীলফামারী যাবার টাকা নাই।” আমার সাথে ও দাঁড়িয়েছিলো। বললো, “দিয়ে দেন কিছু টাকা” আমি দুটো পাঁচশটাকার নোট দিয়েছিলাম। পরদিন একেটু দূরেই দেখি সেই নীলফামারীর মহিলা। আমি তার কাছে যেতেই বললো সে আমাকে চেনেনা। এভাবে ভিক্ষাবৃত্তির নামে প্রতারণাও কিন্তু চলছে।
বাঙালি অলস জাতি। দেশ স্বাধীন হবার পর যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশ নির্মাণে আমাদের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী দেশে দেশে ঘুরে অর্থ ভিক্ষা করে এনেছেন। গরীব ভিক্ষুকদের হয়তো দোষ দিয়ে পার পাওয়া যাবে, কিন্তু শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাটা জানেন? এদের পরিশ্রমের জায়গাটা কোথায়? যে প্রসঙ্গে ছিলাম- ভিক্ষাবৃত্তি। একদিনের মুসলমান বা একমাসের মুসলমান বাংলাদেশে অভাব নেই। বর্বর আইএস বা তালেবান থিউরি অনুযায়ী ইসলামের নামে মানুষ হত্যা জায়েজ অথচ নিজে ইসলাম মেনে যাকাত প্রদান করেনা এদেশের মুসলিমরা। কারণটা যে- "টাকা" । কে চায় নিজের টাকা অন্যকে বিলিয়ে দিতে? জিহাদ তো পরের বিষয় ভাইজান, যাকাত কিন্তু ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিধান। কোরানে আল্লাহ বলেছেন, “নামায কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো”। আপনি করছেন কি?
এক হিসাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ ১০ লক্ষ কোটি টাকা। এর আড়াই শতাংশ হারে যাকাতের পরিমাণ হয় ২৫ হাজার কোটি টাকা। ২৫ হাজার কোটির জায়গায় যদি ১২ হাজার কোটি টাকাও বছরে যাকাত আদায় হয়, চিন্তা করেন একটা ভিক্ষুক খুঁজে পাওয়া যাবে কি না।
বন্দরের ডায়বেটিস হাসপাতালে আরেক ভিক্ষুক পেয়েছিলাম। বুড়িটার নাম সখিনা বানু। জিজ্ঞেস করলাম "সারা দিনে কত ট্যাকা পান?" ফ্যাল ফ্যাল চোখে উত্তর দেন, "কোন কোন দিন ৬০/৭০, ভাগ্য বালা তাকলে ১০০ ট্যাকাও পাই। সবই কপালরে বাবা।" তার ছেলে তাকে ভাত-কাপড় দেয়না। এটা ছেলের দোষ নয়, এটা সখিনা বানুর কপাল। এরকম কপালকে দোষ দিয়ে এদেশের বোকা মানুষেরা আমৃত্যু সারাজীবন কাটিয়ে দেয়। মুখ দিয়েছেন যিনি আহারও দিবেন তিনি। তাই আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকবো, কাজ করবো না। ভাতের প্লেট সামনে নিয়ে বসে থাকবো কিন্তু হাত ধুয়ে মুখে খাবার উঠাবো না। ছিড়া ব্লাউজটা ঢেকে সখিনা জানালেন, পরনের শাড়িটা নাকি যাকাতের শাড়ি। এদেশে যাকাতের শাড়ি আছে, যাকাতের লুংগি-গামছা আছে। যে কাপড়গুলো এক ধোয়া দিলে ত্যানা ত্যানা। কি বুঝলেন?
পরিশ্রম করুন, ভাল কাজ করুন- অন্যদেরও সুযোগ করে দিন, সৎ পথে চলুন। ভাগ্য এমনিতেই বদলে যাবে। সকল ভিক্ষুক পূনর্বাসিত হোক।
লেখকঃ ফয়সল খলিলুর রহমান, কর্মকর্তাঃ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

Thursday, February 23, 2017

বাংলাদেশের মিডিয়া ও পশ্চিমবঙ্গের ধারণা

১.

বাংলাদেশ, বাংলাদেশের অবস্থা এবং বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে প্রায় কোনো ধারণাই নেই পশ্চিমবঙ্গের মফস্বলবাসীর। কারণ, সেখানকার মিডিয়ায় কোনো স্থান নেই বাংলাদেশের। বাংলাদেশের খবর বলতে শেখ হসিনার কিছু কথা থাকে অনেক দিন পরপর। সেটাও ভারতের প্রশংসা করে বলা কথা। আর বাংলাদেশের কোনো টিভি বা রেডিও চ্যানেল যেহেতু সেখানে প্রবেশাধিকার পায় না, তাই সাধারণ মানুষের কোনো উপায় নেই আমাদের দেশ সম্পর্কে জানার।

এ কথা কেবল সাধারণ মানুষ সম্পর্কেই নয়, বরং সেখানকার রাজনীতি-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশের মানুষ তাদের কাছে ‘ফরেনার’। কলকাতার মানুষের কাছেই যেখানে বাংলাদেশ মানেই এখন হয় মৌলবাদী হামলায় জর্জরিত দেশ, অথবা কাদের-নিজামীদের ফাঁসি দেওয়ার দেশ। আর হিন্দুদের তাড়িয়ে দেওয়ার দেশ। সেখানে মফস্বলবাসী আর কী ভাবতে পারেন নিজে নিজে? তবে তাঁদের জানার ইচ্ছাটা কিন্তু প্রচণ্ড। অসংখ্য প্রশ্ন তাঁদের। বাঙালি, বিহারি, সাঁওতাল, বাউরি, শিক্ষক-ছাত্র, সংস্কৃতিকর্মী—সবাই বাংলাদেশ সম্পর্কে খুবই কৌতূহলী। আমরা যে খাদ্যশস্য উৎপাদনে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছি, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে বিশাল অঙ্কের, আমরা যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছাড়াই শুধু নিজেদের সম্পদ দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছি—এসব তথ্য তাঁদের কাছে রূপকথার মতো।

২.

বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরন্তর ভারতে চলে যাওয়ার ব্যাপারটি আমি সরাসরি স্বীকার করে নিয়েছি। বহুমাত্রিক কারণগুলো জানানোর চেষ্টা করেছি। সেইসঙ্গে প্রশ্ন করেছি—আপনাদের এখানে কি ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং দলিতরা নিরাপদ? উত্তরে সবাই বলেছেন যে তাঁরা কেউ নিরাপদ নন, নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন সর্বদা। নিগ্রহ ভোগ করেন, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন, নারীরা ধর্ষিতা হন, পুরুষরা নিহত হন, সামাজিক মর্যাদাহানির শিকার হন প্রতিনিয়ত। সরকারি চাকরিতে মুসলিম এবং নিম্নবর্গের মানুষের শতকরা অবস্থান রীতিমতো শোচনীয়। বাংলাদেশের তুলনায়ও খুবই শোচনীয়। তবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অন্যত্র চলে যেতে পারলেও পশ্চিমবঙ্গের উনারা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার কথা ভাবেন না। কারণ, অন্য কোথাও যে যাওয়া যেতে পারে, সেটা তাঁরা জানেনও না। খুবই সত্যি। কারণ, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ তো আর তাঁদের ধারণ করতে পারে না।

তবে এঁদের মধ্যে যাঁরা একটু তলিয়ে দেখার চেষ্টা করেন, তাঁরা বাংলাদেশ থেকে দেশত্যাগী হিন্দুদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টাও করেন। এখানকার সব হিন্দুই নাকি বিশাল বিশাল জমিদারি ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। একজন বললেন, শুধু শিয়ালদহে যেসব বাঙাল (বাংলাদেশের হিন্দু) এসে উঠেছে, তাদের ফেলে আসা সম্পত্তির যোগফল বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে।

আরএসএস নাকি কয়েক দিন আগে দাবি করেছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ কোটি হিন্দু বিতাড়িত হয়েছে। এই সংখ্যার কথা অবশ্য উনারাও বিশ্বাস করেন না বলে জানালেন। তবে ভারতের বিশাল প্রভাবশালী ব্রাহ্মণ্যবাদী গোষ্ঠী এই রকম গালগল্পও বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন এবং প্রচারও করেন।

তবে ব্যাধিটা যে আছে, ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই।

৩.

মিডিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কে যতটুকু জানায়, তার ভিত্তিতে ওখানকার লোকেরা বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশে কেবল দুই ধরনের মানুষ আছে। একদল ভারতপন্থী, আরেকদল ভারতবিরোধী।

আমরা যে ওই রকম মোটাদাগে বিভক্ত নই, সে কথা জেনে উনারা অবাকই হলেন। আমি যখন জানালাম যে ভারতের কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে আমাদের, দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক অনেক পুরোনো, এটা একটি দিক। আরেকটি দিক হচ্ছে কিছু অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে এবং সেই ইস্যুগুলোর সমাধান যে ভারতের কারণেই হচ্ছে না, সেটাও সত্যি। সুন্দরবনের কাছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ভারত সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও আমাদের দ্বিমতের কথা জানালাম।

তবে পানিপ্রবাহের সমস্যার কথাটা কেউ কেউ জানেন। তাঁরা রাজনীতির বাইরে অবস্থান নিয়ে খুবই মানবিকভাবে বললেন—পানি যারা আটকায়, তাদের দুর্ভিক্ষ কোনো দিন শেষ হয় না। এত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভারতের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ যে খেতে পায় না ঠিকমতো, তার অন্যতম কারণ হিসেবে জল আটকানোর পাপটিকেও নতুনভাবে আবিষ্কার করলেন তাঁরা।

৪.

বাংলাদেশ থেকে দলে দলে রোগী ভারতে ছোটে চিকিৎসার জন্য। রোগীদের এই ভারতযাত্রার কারণ খোঁজার চেষ্টা করার দায়িত্ব আমাদের দেশের সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ তো দেখা যায় না। তাই নিজেই কৌতূহল নিয়ে ওখানকার চিকিৎসাব্যবস্থা দেখার চেষ্টা করি। পশ্চিমবঙ্গের মফস্বলে চিকিৎসার অবস্থা ভয়াবহ। লোকজন জানাল, সারা ভারতেই সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থার একই চেহারা। তাই দূর মফস্বলেও জ্বলজ্বল করে জ্বলছে ক্লিনিক-নার্সিং হোম-বেসরকারি হাসপাতালের উজ্জ্বল সাইনবোর্ড।

আমাদের দেশে একটা মিথ ছড়ানো হয়েছে। তা হচ্ছে, ভারতে বেসরকারি চিকিৎসার খরচটা বাংলাদেশের থেকে অনেক কম। ডাহা মিথ্যা কথা। ১৫ ফেব্রুয়ারিতে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় বিরাট করে বেরিয়েছে একজন রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাঙচুরের খবর। জানা গেল, পারফোরেশন অব বাওয়েল নিয়ে ১৬ বছরের একটি মেয়ে ভর্তি হয়েছিল সেই হাসপাতালে। অপারেশনের জন্য রোগীর কাছে দাবি করা হয়েছিল দেড় লাখ ভারতীয় রুপি। গরিব মা-বাবা ৪০ হাজার রুপি জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি টাকা জোগাড় না করা পর্যন্ত রোগীর অপারেশন করতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল রোগী। সেই ক্ষোভে রোগীর এলাকার মানুষ ভাঙচুর করেছে হাসপাতাল।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আনন্দবাজার পত্রিকা এমনভাবে খবরটা তৈরি করেছে, যাতে দেখানো হয়েছে যে প্রায় বিনা চিকিৎসায় রোগীর মারা যাওয়াটা কোনো ঘটনা নয়। ঘটনা হচ্ছে হাসপাতাল ভাঙচুর। কারা কারা ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের ছবি প্রথম পাতায় গুরুত্বের সঙ্গে ছেপেছে আনন্দবাজার। এবং যেভাবে খবরটি পরিবেশন করা হয়েছে তাতে বোঝা যায়, হাসপাতালের অমানবিক অবহেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে অবিলম্বে রোগীর আত্মীয়দের গ্রেপ্তার করানোটাই তাদের মুখ্য দাবি।

এ ধরনের অপারেশন আমাদের দেশের জেলা শহরগুলোতে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ২০-২৫ হাজার টাকা। ঢাকায় সেটি ৬০-৭০ হাজার হতে পারে। কিন্তু কলকাতায় দেড় লাখ রুপি! ভারতে সস্তায় চিকিৎসার প্রপাগান্ডা যাঁরা ছড়িয়ে বেড়ান, তাঁদের মুখে স্কচটেপ আটকে দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশের রোগীরা সস্তায় উন্নত চিকিৎসার নামে ভারতে গিয়ে গলাকাটা দিয়ে আসছে। আমার মনে হয়, আগামী বছর দশেক পর পূর্ব ভারতের রোগীরা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসবে।

৫.

বেসরকারীকরণের ভালো একটা দৃষ্টান্ত দেখা গেল এবার। পশ্চিমবঙ্গের আমলাদের জন্য নতুন গাড়ি কেনা প্রায় বন্ধ। গাড়ি কিনলে তার জন্য ড্রাইভার নিয়োগ, তেল-মবিল খরচ, তেলচুরি, মাসে মাসে নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং সার্ভিসিংয়ের নামে টাকার শ্রাদ্ধসহ নানা রকম হ্যাপা। তার বদলে এখন মাসকাবারি চুক্তিতে বেসরকারি গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়। সরকার মাসে মাসে একটা টাকা ধরিয়ে দেয়। বাকি সব হ্যাপা গাড়ির মালিকের।

বাংলাদেশ সরকার আমলাদের জন্য শত শত গাড়ি কিনেই চলে। সব জায়গায় বেসরকারীকরণের ঢক্কানিনাদ। তবে অবশ্যই সামরিক-বেসামরিক আমলারা সব ধরনের বেসরকারীকরণ থেকে চিরকালের জন্য মুক্ত।

৬.

বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে ভারতের সাধারণ মানুষকে অজ্ঞ করে রাখা এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাখার পেছনের কারণটা কী?

ভারতের মানুষ জানে, বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় ভয়ংকরভাবে পিছিয়ে পড়া দেশ। এই দেশের মানুষ খেতে পায় না। কাজ পায় না। কাজ করতে সীমান্ত টপকে ভারতে ছোটে। অথচ প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিক চাকরি করে বাংলাদেশে। ভারতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে থেকে যে রেমিট্যান্স যায়, তার পঞ্চম স্থানে আছে বাংলাদেশের নাম। এই তথ্য জেনে তো সেখানকার মানুষ আকাশ থেকে পড়ে প্রায়!

সেখানকার একজন চিন্তাশীল মানুষ আমাকে বললেন, পাকিস্তান বা চীন যতটা ভয়ের কারণ ভারতের, তার চেয়ে বেশি ভয়ের কারণ বাংলাদেশ। কারণ, ভারতের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের মানুষ যদি জানতে পারে স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ফলে বাংলাদেশের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা, তাহলে তারাও স্বাধীন হতে চাইতে পারে।

এটি হয়তো নেহাতই একটি খেয়ালি ধারণা।

প্রচণ্ড দুর্নীতি, শাসকগোষ্ঠীর দেশপ্রেমহীনতা, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র—সবকিছুর পরেও বাংলাদেশটাকে এগিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের অদম্য প্রাণশক্তি। বাংলাদেশের মানুষের অদম্য এই প্রাণশক্তির কথা জানতে পেরে তাঁরা একই সঙ্গে বিস্মিত এবং আনন্দিতও।
লেখখঃ জাকির মোহাম্মদ,
প্রোগ্রাম অফিসার,  বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।

(১৪ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি-২০১৭, পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি মফস্বল অঞ্চলে কাটিয়ে এসে লেখা।)

Sunday, February 19, 2017

নির্বাচিত কলামঃ হাবিব ইমরান

মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআনের কোনো কোনো আয়াতের ‘অপব্যাখ্যা’ দিয়ে সন্ত্রাসবাদে উদ্বুদ্ধ বা ‘ব্রেনওয়াশ’ করা হয়, আপনি জানেন?
মুরতাদ-মুশরিক-কাফের কাকে বলে? এদের মধ্যে পার্থক্যই কী ? মন্দির-গির্জা-প্যাগোডা রক্ষা করার দায়িত্বও একজন মু’মিনের, যেটা কিনা জিহাদেরই অংশ- জানেন কি!
আট দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব রাজনীতি ও ইসলামকে কেন্দ্র যেসব প্রশ্ন, প্রসঙ্গ এবং বিতর্ক বারবার ঘুরেফিরে এসেছে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ইসলাম বইটিতে সেগুলোর সব উত্তর রয়েছে।
মাত্র আটাশি পৃষ্ঠার বইটি পড়তে একজন সাধারণ পাঠকের সময় লাগবে তিন থেকে চার ঘণ্টা, বিনিময়ে পাবেন ইসলাম সম্পর্কে আশি বছরেরও বেশি সময় ধরে জমিয়ে রাখা কিছু প্রশ্নের পরিষ্কার এবং নির্ভরযোগ্য উত্তর।
উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত ‘শোলাকিয়া’র গ্র্যান্ড ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ-এর বইটি সাজানো হয়েছে প্রশ্নোত্তরের ছলে। সমসাময়িক দুনিয়ায় আগুনের মত গনগনে বিষয়- জিহাদ, কিতাল, আত্মঘাতী হামলা, খিলাফত, নারী ও ইসলাম, হিজাব, কওমী মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিনিয়ত জমা হতে থাকা প্রশ্নগুলো আল কোরআন ও সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে দৃঢ়ভাবে ব্যাখা দেওয়া হয়েছে এতে।
‘ছাপ্পা ঘুড়ি’র মত এলোমেলো দুলতে থাকা নানা বিষয়কে এক সুতোয় বাঁধতে গিয়ে মাওলানা মাসঊদ উত্তর শুরু করেছেন গোড়া থেকেই- কখনো কখনো বেছে নিয়েছেন ফিকহ শাস্ত্রের রেফারেন্স।
জিহাদের নামে সন্ত্রাসবাদ তৈরি করে বিশ্বব্যাপী যে ‘ইসলামোফোবিয়া’ তৈরি করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মাওলানা মাসঊদের এ বইটি একটি ‘জিহাদ বিল কালম’ এর উদাহরণ।

বইটি পড়তে গিয়ে বারবার ধাক্কা খেতে হয়েছে। বইটির শুরুতেই জিহাদের উপর আলোচনা করতে গিয়ে সরাসরি বাতিল করে দিয়েছেন ব্যক্তি উদ্যোগে সশস্ত্র জিহাদ বা ‘কিতাল’-এর ধারণাকে। মাওলানা মাসঊদ হাদিস তুলে ধরে দেখিয়েছেন- ‘কিতাল’-এর ডাক দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র আমীর বা মুসলিমদের পক্ষ থেকে নির্বাচিত প্রশাসনিক প্রধানের।

_AS_0224সশস্ত্র সংগ্রাম এর বদলে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের ‘রিপু, প্রবৃত্তি ও পশুত্ব’ অর্থাৎ ‘নফস’-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকেই ‘জিহাদে আকবর’ বা বড় জিহাদ মনে করতেন।
ঢাকার জামি’আ মাদানিয়া, ফরিদাবাদ মাদরাসা, মালিবাগ জামি’আ, জামি’আ মাদানিয়া বারিধারাসহ অসংখ্য মাদরাসায় হাদীসের দরসদানকারী এবং ‘শাইখুল হাদীস’- এর দায়িত্বপালনকারী মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ হাদিস দিয়েই ‘জিহাদে আকবর’ এর উদাহরণ টেনেছেন-
“বায়হাকী ‘কিতাবুয যুহদে’ হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণনা করেন, রসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে যুদ্ধ সমাপ্তকারী এক দল এল। রসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ছোট জিহাদের থেকে বড় জিহাদের প্রতি তোমাদের আগমন শুভ হোক। তারা বলল, বড় জিহাদ কোনটি? রসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ।
হাদীস নং-৩৮৩”
‘জিহাদ’ শিরোনামের প্রারম্ভিক অধ্যায়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ এসেছে প্রশ্নের ধারাবাহিকতায়। আমরা যেটাকে বলি সন্ত্রাসবাদের জন্য ‘ব্রেইনওয়াশ’- সেটি পবিত্র কোরআনের কোন কোন আয়াতের অপব্যাখ্যা দিয়ে করা হয়, তার সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন মাওলানা মাসঊদ।
তিনি বলেছেন, “এরা প্রধানত কয়েকটি আয়াত এবং হাদীসের একটি ঘোষণার অপব্যাখা দিয়ে হত্যার বিষয়টিকে জায়েজ করার চেষ্টা করে।”
সুরা তওবা-এর আগের চারটি আয়াত বাদ দিয়ে ৫ নম্বর আয়াতকে নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট বা শানে নুযুল বিচ্ছিন্ন করে বিকৃতভাবে ব্যবহারের উদাহরণ টেনেছেন মাওলানা মাসঊদ।
সহীহ বুখারী ও মুসলিম-এ উল্লেখিত হাদীস ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু স্বীকার করা না পর্যন্ত আমি লড়াই করতে নির্দেশিত হয়েছি’ হাদীসটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
মাওলানা মাসঊদ বলছেন, “যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নাজিল হওয়া এই আয়াত ও হাদীসের অর্থ সাধারণভাবে প্রযোজ্য নয়।”
‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ইসলাম’ বইটিতে মোট সাতটি অধ্যায় রয়েছে। এগুলো হলো- জিহাদ, ইসলাম ও অন্য ধর্মের সহাবস্থান, ইসলাম ও ইসলামী গোষ্ঠীসমূহ, আইন, নারী, ইসলাম ও উপমহাদেশ এবং শিক্ষা ব্যবস্থা।
বইটির দ্বিতীয় অধ্যায় অর্থাৎ ‘ইসলাম ও অন্য ধর্মের সহাবস্থান’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জিজিয়া, অমুসলিমদের প্রতি আক্রমণ, ধর্ম পালনে বাধ্য করা, অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে হামলা ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে একটি প্রশ্ন হচ্ছে- ‘অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে হামলা কি ইসলাম সমর্থন করে?’ এর উত্তরে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ স্পষ্টতই বলছেন- “অন্য ধর্মের মানুষদের রক্ষা করা যেমন মুসলমানদের দায়িত্ব ঠিক একইভাবে অন্য ধর্মের উপাসনালয় রক্ষা করাটাও মুসলমানদের পবিত্র দায়িত্ব, যা জিহাদেরই অংশ।”
এর উদাহরণ টানতে গিয়ে মাওলানা মাসঊদ সুরা হজ্জ এর ৪০ নম্বর আয়াতের রেফারেন্স দিয়েছেন। ভিন্নমত পোষণকারীদের কোন অবস্থাতেই ইসলামের দৃষ্টিতে হত্যার সুযোগ নেই বলে মনে করেন মাওলানা মাসঊদ।
তার মতে, “ইসলাম কোনভাবেই এটি সমর্থন করে না।”
‘ইসলাম ও ইসলামী গোষ্ঠীসমূহ’ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সন্ত্রাসবাদ ও আত্মঘাতী হামলা নিয়ে কথা বলেছেন। যেকোন ধরনের ‘আত্মহত্যা’ বা আত্মঘাতমূলক কাজ যে ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহ তা হাদিসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এই অধ্যায়ে কাফের, মুশরিক ও মুরতাদ কারা এবং সেটি কে নির্ধারণ করবে সে ব্যাপারে কিছু প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে এসেছে ইসলামের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও মতবাদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও। তাকফীরী থেকে হাল আমলের উগ্র জঙ্গিবাদী আইএস, সালাফী এবং ওয়াহাবী, খারিজী, শিয়া, মুরজীয়া, আহমদীয়া ইত্যাদি নানা গোষ্ঠীর মুসলিম মতাদর্শের পার্থক্য উঠে এসেছে মাওলানা মাসঊদের সংক্ষিপ্ত অথচ সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ উত্তরে।
আইন অধ্যায়টিতে মদীনা সনদ ও শরীয়া আইন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কুরআন-হাদীস তো বটেই হাদীস সংগ্রহের প্রক্রিয়া নিয়েও দৃষ্টান্তসমেত সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন মাসঊদ। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ইজমা এবং কিয়াস এখন আর ব্যবহার করা না হলেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
Farid-unddin‘নারী’ অধ্যায়টিতে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম মাওলানা মাসঊদ। বর্তমান সময়ের আলোচিত ইস্যু ‘হিজাব’ বাধ্যতামূলক কি না সেটি নিয়ে যেমন আলোচনা আছে, কথা বলেছেন নারীর কর্মসংস্থান নিয়েও।
‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ইসলাম’ বইটি মূলত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং (বিপিএল)-এর পক্ষ থেকে নেওয়া মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের ফসল।
‘ইসলাম ও উপমহাদেশ’ অধ্যায়টিতে এই অঞ্চলের রাজনীতির সঙ্গে ইসলামের জড়িয়ে পড়ায় প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মাওলানা মাসঊদ বলছেন- রাজনৈতিক বা ‘পলিটিক্যাল ইসলাম’ বলতে কিছু ইসলামে নেই। এটি একটি নয়া দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসলামে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য এই শব্দটি সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দেওবন্দ ও তাবলীগ জামায়াতের মতপার্থক্য নিয়ে যথেষ্ঠ আগ্রহোদ্দীপক তথ্য চলে এসেছে। এ অধ্যায়ের এক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে পিস টিভির জনপ্রিয় উপস্থাপক জাকির নায়েক প্রসঙ্গে। পাশাপাশি বাংলাদেশের আবাসিক মাদরাসাগুলোর নানা প্রসঙ্গও এসেছে।
কওমী মাদরাসার শিক্ষায় এখনো ভরসা করেন মাওলানা মাসঊদ। শেষ অধ্যায় ‘শিক্ষা’ নিয়ে আরও দীর্ঘ আলোচনা হলে ভালো হত। বিশেষ করে কওমী মাদরাসার ইতিহাস টানতে গিয়ে দেওবন্দ মাদরাসার বিষয়টি হঠাৎ করেই ফুরিয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে।
তাছাড়া আধুনিক শিক্ষা নিয়ে মাওলানা মাসঊদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আরও আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে।
ক্ষুদ্র পরিসরের একটি বইয়ে সব প্রশ্নের উত্তর এবং অবতারণা সম্ভব নয়; সাক্ষাৎকারের বইটি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই মনে হলো, এ বইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়নি। আর সেটি হচ্ছে- ‘ওয়াজ এবং খুৎবা’। আশা করি, বইটির পরবর্তী সংস্করণে এটি সংযুক্ত করার কথা বিপিএল কর্তৃপক্ষ ভাববেন!
আশি বছরের বেশি সময় ধরে একজন মুসলমান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ইসলাম ও নিজের করণীয় সম্পর্কে যেসব সাধারণ প্রশ্ন করেছে- ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ইসলাম’ বইটি তাদের জন্য এক চমৎকার খোরাক।

বইমেলা উপলক্ষে এখন ২৫% কমিশনে এখন কিনতে পারবেন ক্রেতারা। বাংলা একাডেমির মূল চত্বরে আয়োজিত মেলায় বিপিএল(৬৫-৬৬ স্টল)-এ পাওয়া যাচ্ছে বইটি।

ঐতিহাসিক মুরারিচাঁদ কলেজ ও কিছু কথা

M C College was established on 27 June 1892 by a local nobleman, Raja Girish Chandra Roy of Roynagar, Sylhet with four teachers and 18 students. The college was named after his maternal grandfather, Murari Chand. It was located beside the present Raja G C School. At the beginning it was a proprietary college. Raja himself used to fund the college. From 1892 to 1908 (16 years) until the death of the Raja it remained proprietary. In 1897, the original college building collapsed in a devastating earthquake, of which Raja Girish Chandra himself was a victim. Though he survived the quakes, the calamity made him financially vulnerable. It was not possible for him to run the college from his own resources from thereon. He urged the government to take over the college so that it could continue as an educational institution. The government took over the college in 1908 after the death of Girish Chandra. Then it became an 'aided' college. For four years it remained 'aided'. On 1 April 1912 the college become fully government administered and was considered as an affiliated college of the University of Calcutta .
In 1925 the college moved to its current campus at Thackarey Hills (now Tilagarh). It is spread on an area of 112 acres of land of a beautiful natural set-up.
In 1942 the Golden Jubilee of the college was observed by the publishing of the Murari Chand College Golden Jubilee Volume.
In 2001, the college had 130 teachers and 6,000 students. There are seven residential hostels for students, which is one of the best residential arrangements of students at the college level in Bangladesh.
In 2000, the college won the national award as the best educational institution.
The library of M C College is famous for its collection of books, which numbers around 100,000. [1]
Currently, all the students of HSC first year obtained GPA 5 in SSC.
Academics
Departments
Bangla
Botany
Chemistry
Economics
English
History
Islamic History and Culture
Islamic Studies
Mathematics
Philosophy
Physics
Political Science
Psychology
Sociology
Statistics
Zoology
Infrastructure
Academic buildings
Presently there are nine academic buildings in the college. They consist of classrooms, library, department offices, etc., and are mainly used to conduct classes. Almost all of the departments have their own academic buildings.
Library
The central library of the college is one of the oldest in the region. It houses a huge number of volumes; many of them are rare. The library is widely used by researchers. It holds more than 90,000 books.
Principal
The current principal is Nithai Chondro Chondo.

Sunday, November 6, 2016

হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই!

কয়েকদিন যাবত ফেসবুকে অামার হিন্দু ধর্মাবলম্বী কতিপয় বন্ধুদের প্রোফাইল ছবিটি কালো দেখে অামি নিজেও লজ্জায় কালো হয়ে যাচ্ছি। তারা একটি ঘৃন্য, জগন্য কর্মকান্ডের প্রতিবাদ হিসেবে এটি করছেন। অাসলে ফেসবুকে অামার অনেক হিন্দু বন্ধু রয়েছে যাদের সাথে অামার ভালো একটি সম্পর্ক রয়েছে। শুধু ভার্চুয়াল জগতে নয় বাস্তব জীবনে অামার ঘনিষ্ট বন্ধুদের তালিকায় রয়েছে অসংখ্য হিন্দু বন্ধু। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত কখনও তাদেরকে হিন্দু হিসেবে বা সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করিনি। অামার হিন্দু বন্ধুরাও কখনও অামাকে মুসলিম হিসেবে অালাদা করেনি। একসাথে খাই-দাই-ঘুমাই-ঘ
োরাফেরা করি-ফুর্তি করি অারও কত কি! ছাত্র জীবনে যেমন অনেক হিন্দু বন্ধু পেয়েছি তেমনি কর্ম জীবনেও অামার অনেক হিন্দু সহকর্মী রয়েছেন যারা সত্যিকার অর্থেই অসাম্প্রদায়ীক চেতনার সাদা মনের মানুষ। এইতো গত ৩ তারিখে অামার জন্মদিনে পার্টি দিলেন অামার এক হিন্দু সহকর্মী। গতবছরও অামার জন্মদিনে সবাইকে অবাক করে বিশাল এক পার্টির ব্যবস্থা করেছিলেন অামার এক হিন্দু সহকর্মী। তাঁদের ওইসব অায়োজন অামাকে সত্যিই অবাক করে দিয়েছিল। অামি মুগ্ধ হয়েছিলাম। ছাত্র জীবন শেষে কর্ম জীবনের ৫ টি বছর হিন্দু-মুসলিম মিলে একসাথে কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু একটিবারও মনে হলো না অামরা কেউ মুসলিম বা কেউ হিন্দু। হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই হিসেবেই অামরা চলছি। সম্প্রতি ব্রামণবাড়িয়ায় যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা সত্যিই দুঃখজনক এবং লজ্জা জনক। একজন মুসলিম হিসেবে এটা অামার লজ্জা, অামার ব্যর্থতা। কারণ ইসলাম ধর্ম কখনও সহিংসতাকে সমর্থন করেনা। শুধু ইসলাম কেন কোনো ধর্মই তো খারাপ কাজকে সমর্থন করেনা। প্রকৃতপক্ষে ধর্ম সম্পর্কে যারা অজ্ঞ, মূর্খ তারাই এসব ঘৃনিত কর্মকান্ডগুলা ঘটাচ্ছে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করাও একধরনের মূর্খতা। অামার গ্রামের বাড়ির পাশের ঘরটি হিন্দু। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি অামাদের পরিবারের সাথে তাদের এক অসাধারণ ঘনিষ্ট সম্পর্ক। তাদের পূঁজা-পার্বনে সর্বপ্রথম নিমন্ত্রণটা অাসে অামাদের ঘরে। অামরাও ঠিক একই রকম। অামার বাবা ছিলেন একজন অালেম। এক মসজিদে ইমামতি করেছেন একটানা ৩০ বছর। জীবদ্দশায় ধর্ম প্রচার করে গেছেন নিরলসভাবে। কিন্তু ধর্মের নামে ভন্ডামি অার সহিংহসতার প্রতিবাদ করেছেন কঠোরভাবে। বাবা হজ্ব শেষে ফিরে এসে সৌদি অারব থেকে নিয়ে অাসা খেঁজুরের প্যাকেটটি প্রথম হিন্দু বাড়িটিতেই পাঠিয়েছিলেন।
যাই হোক, ইদানিং ব্রাম্মণবাড়িয়ার ঘটনা নিয়ে একজন মুসিলম হিসেবে অামি অামার হিন্দু বন্ধুদের কাছে লজ্জিত, দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।
অাবারও বলতে চাই-
হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই
মিলে-মিশে থাকতে চাই।

লেখক জসিম উদ্দিন,
প্রভাষক, বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ, হবিগঞ্জ।
facebook.com/jashimsly

Monday, August 1, 2016

বিয়ে এবং সাবধানতা!


পালিয়ে বিয়ে করতে গেলে অনেক ছেলে মেয়েদের, মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয় যেমন,বিয়ের পরে কোনো সমস্যা হবেনাতো বা বিয়েটার বৈধতা কেমন হবে।
বিয়েটাই বা কোথায় করতে হবে?
কোর্টে নাকি কাজি অফিসে?
ছেলেরা ভাবে, মেয়ের বাবা যদি মামলা করে দেয় নারী নির্যাতনের?
তাহলে কি জেল টেল খাটতে হবে? ইত্যাদি।
অনেকে ভাবেন এসব ক্ষেত্রে হয়ত কোর্ট ম্যারেজ করতে হবে।
কোর্ট ম্যারেজ টার্মটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু এটা নিয়ে অনেকের একটু ভুল ধারনা আছে।অনেকে যারা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বা পালিয়ে বিয়ে করতে চায় তারা কোর্ট মারেজ করতে যায় বা করতে চায়।অনেকে মনে করেন কোর্ট ম্যারেজ হয়তো কোর্টে গিয়ে বিয়ে করা।অথবা মাজিস্ট্রেট-এর সামনে বিয়ে করা।আসলে তা নয়।
কোর্ট ম্যারেজ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে কোন নোটারী পাবলিকের (সরকারী রেজিস্টার্ড উকিল) কাছে। তিনি আপনাদেরকে (বর কনে) ১০০বা ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে একটি হলফনামায় সই
করাবেন যাতে লিখা থাকবে আপ্নারা প্রাপ্তবয়স্ক এবং সজ্ঞ্যানে সেচ্ছায় বিয়ে করেছেন।তার মানে কি দাড়ালো? বিয়ে.আপনাদেরকে আগেই করতে হবে। কোথায়? যথারিতি কাজী অফিসে।
রেজিস্ট্রী কাবিনমুলে।কাজী অফিসে কাবিননামায় সই করতে হবে ।কাজি সাহেবকে আপনাদের এস এস সি-এর সার্টিফিকেট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ডদেখাতে হবে বয়স প্রমানের জন্য। বয়স অবশ্যই আঠারো (মেয়ে) ও একুশ (ছেলে) হতে হবে। আর লাগবে দুইজন সাক্ষী। আর অই কাবিননামাই আপনাদের বিয়ের প্রধান আইনী দলিল।
আর নোটারী পাব্লিকের কাছে গিয়ে আপনি শুধু অই দলিলের আরও একটা সম্পূরক আইনী দলিল করে রাখলেন ভবিস্যতে মামলা টামলায় একটু
সুবিধা পেতে।তবে জেনে রাখবেন, নোটারী পাবলিকের কাছে করা হলফনামার কোনো দাম নেই যদি আপনার কাবিননামা না থাকে।
কাবিননামা থাকলে আপনার বিয়ের পক্ষে আর কোনো ডকুমেন্টই লাগবেনা। কাবিননামাই সব।বিয়ে হয়ে গেলে অনেকসময় পরে দুই পক্ষের
বাবা মা-রা মেনে নেয়, অনেকময় মেনে নেয়না। অনেকসময় মেয়ের বাবা ক্ষেপে গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে বসে।
মামলাগুলো হয় সাধারনত অপহরনপূরবক ধর্ষনের। এই মামলাগুলোর জামিন বা রিমান্ড শুনানী এবং বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে।মামলার­ ধারাগুলো জামিন-অযোগ্য। এবং আমলযোগ্য, মানে পুলিশ এসব ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের পারমিশন ছাড়াই আসামিকে এরেস্ট করতে পারে। তাই যখন শুনবেন মামলা হয়েসে তখন থেকে কিছুদিন পালিয়ে থাকুন কারন পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে কিন্তু প্রথমেই জামিন হবেনা।আর মানসিকভাবে শক্ত থাকুন, দুজনেই।
মামলা (উক্তরূপ) হবার পর তদন্ত শুরু হবে।ভিকটিম (মেয়ের বাবার
চোখে মেয়েটি এখানে ভিকটিম)-এর জবানবন্দী দিতে হবে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-এর সামনে। এটি ২২ ধারার জবানবন্দি, ম্যাজিস্ট্রেট-এর চেম্বারে হয়। কেউ কোন প্রভাব খাটাতে পারেনা। এখানে মেয়েকে বলতে হবে, “আমি সেচ্ছায় বিয়ে করেছি। আমাকে কেউ অপহরন করেনি।“ব্যাস।
তাহলে মামলায় পুলিশ আর চার্জশীট দেবেনা। আসামি (ছেলে) অব্যাহতি পাবে।
,
প্রেম করে বিয়ে; অতঃপর মামলা ও তার ফলাফল
:
অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা তাদের ভালবাসাকে বাস্তবে রুপ দিতে একে অপরকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সাবালক-সাবালিকা হিসেবে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ও আইনগত অধিকার তাদের আছে। সেই অধিকারের ভিত্তিতে তারা স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এতে বাঁধ সাধে উভয় পরিবারের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন। শেষমেশ বিষয়টি অনেক সময় থানা-কোর্ট কাচারীতে গিয়ে পৌঁছায়। তাতে কার কি লাভ হয়-এ নিয়েই একটি বাস্তব কেইস স্টাডি।
গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের পরিপাটি চেহারার ভদ্রলোক মামলা করেছেন থানায় একজন তরুণ স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ হচ্ছে, শিক্ষক বেচারা ভদ্রলোকের স্কুল পড়–য়া নাবালিকা মেয়েকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অপরাধ খুবই গুরুতর। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় যুবক শিক্ষক অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সহসা জামিনের আশা নেই। কারণ, প্রথমত জামিন অযোগ্য ধারার অপরাধ, দ্বিতীয়ত এ মামলায় জামিন শুনানী করার এখতিয়ার নিম্ন আদালতের নেই। সে কারণে অভিযোগকারী ভদ্রলোক মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন আসামীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে শিক্ষক বেচারা গা-ঢাকা দিয়েছে। বাড়িতে আছেন কেবল যুবক স্কুল শিক্ষকের মা-বাবা এবং কথিত অপহরণ করা কিশোরী মেয়েটি।
মামলার এফ.আই.আর সহ মামলাটি আদালতে দাখিল করা হয়েছে। সরকার পক্ষে কোর্ট ইন্সপেক্টর (পুলিশ) আদালতকে বলছেন, হুজুর আসামী খুবই দুর্দান্ত ও প্রভাবশালী। সে ভিকটিম তথা কিশোরী মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে অপহরণ করে নিজের বাড়িতে আটকে রেখেছে। কোর্ট ইন্সপেক্টর আদালতের কাছে ফৌজদারী র্কাযবিধির ১০০ ধারার বিধান মতে, আসামির বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে বে-আইনীভাবে আটক মেয়েটিকে উদ্ধারের অনুমতি প্রার্থণা করেন। আদালত কোর্ট ইন্সপেক্টরের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আসামীর বাড়িতে তল্লাশীর পরোয়ানা ইস্যু করেন। পুলিশ অবিলম্বে এ পরোয়ানার ভিত্তিতে ওই আসামীর বাড়িতে তল্লাশী চালায় এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালতের কাঠগড়ায় এক দিকে উদ্ধারকৃত মেয়েটি এবং তার সঙ্গে কথিত অপহরণকারীর পিতা-মাতা। অন্য দিকে মেয়েটির পিতা-মাতা। মেয়ের পিতা-মাতার দাবী তাদের মেয়ে অপরিণত বয়সের। ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা মেয়েটির হয়নি। তাই তারা মেয়েটিকে তাদের জিম্মায় দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। পুলিশ অফিসারও তাদের আবেদনে সমর্থন করেন। মেয়েটির বয়স কম সে বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য সরকার পক্ষ তথা মেয়ের বাবা মেয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সত্যায়িত একটি সনদপত্র এবং মেয়ের মায়ের একটি এফিডেভিট আদালতে দাখিল করেন।
অন্যদিকে মেয়ের কথিত অপহরণকারী শিক্ষকের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীরা বলছেন, মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্কা, মুসলিম শরিয়াহ মোতাবেক তার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। এ অবস্থায় মেয়েকে তার ইচ্ছানুযায়ী স্বামীর গৃহে যেটি এখন তার নিজেরই ঘর অবস্থানের অনুমতি দেয়া হোক এবং তার শ্বশুর-শাশুড়ির জিম্মায় মুক্তি দেয়া হোক।
উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে মন স্থির করতে পারেন না কি সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত তো তাকে দিতেই হবে। মেয়েটি কোথায় যাবে? পিতার গৃহে নাকি কথিত অপহরণকারীর বা স্বামীর গৃহে? এ পর্যায়ে তিনি মেয়েটির বক্তব্য শুনতে চান। মেয়েটি আদালতকে জানায়, আসামী তার স্বামী। তাদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ে কাজী অফিসে রেজিস্ট্রি হয়েছে। সে তার স্বামীকে ভালবাসে। তাদের বিয়ে উভয় পক্ষের সম্মতিতে করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার স্বামী পারিবারিকভাবে তার পিতা-মাতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তার অহংকারী পিতা-মাতা স্বল্প আয়ের শিক্ষকের সাথে বিয়েতে রাজি হয়নি। তারা বাধ্য হয়ে নিজেরাই বিয়ে করেছে। মেয়েটি জানায়, তাকে তার পিতা-মাতার কাছে যেতে বাধ্য করলে তারা তাকে মারধর করবে, তার উপর অমানসিক নির্যাতন চালাবে এবং তাকে বাধ্য করবে স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে। একবার তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তার স্বামীর জেল হবে।
এ অবস্থায় তার পিতা-মাতার সাথে যাওয়ার চেয়ে তার মৃত্যু হওয়ায় ভালো। এ ধরণের বক্তব্য আদালতে মেয়েটি উপস্থাপন করে। মেয়েটির এ বক্তব্য শোনার পর বিচারক কিছুটা বিভ্রান্ত হন। কি আদেশ দেয়া যায়? অবশেষে তিনি আদেশ দেন ভিকটিমের (মেয়েটির) বয়স প্রমাণের পরীক্ষা করার জন্য ভিকটিমকে সিভিল সার্জনের কাছে প্রেরণ করা হোক। ভিকটিমের বয়স প্রমাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জুডিশিয়াল কাস্টোডিতে তথা বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখা হোক। বয়স প্রমাণের পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর এবং এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে। দুদিন পর মেয়েটির বয়স সম্পর্কে প্রতিবেদন পাওয়া গেল। মেডিকেল রিপোর্টে দেখা গেল মেয়েটির বয়স ১৫ হতে ১৬ বৎসরের মধ্যে, অন্যদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক যে সনদপত্র দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মেয়েটির বয়স ১৫ বৎসর। আর মেয়েটির মা এফিডেভিট করে বলেছেন, তার মেয়ের বয়স ১৩ বছর। সব মিলিয়ে মেয়েটির বয়স যে কত তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় উভয় পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবীরা তাদের নিজ নিজ দাবীর পক্ষে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিচারক যে আদেশ দেন তা নিম্নরুপঃ
উভয় পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের বক্তব্য ভিকটিমের বয়স সম্পর্কিত প্রমাণাদি পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করা হলো। বিয়ের কাবিননামা দেখা গেল, সমাগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এবং ভিকটিমের বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করে আদালতের কাছে মনে হচ্ছে যে, ভিকটিমের বয়স ১৬ বছর অতিক্রম করেছে স¤ভাবনা বাদ দেয়া যায় না। তদুপরি তার বয়স নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং ঘটনা ও পারিপার্শি¦ক অবস্থা বিবেচনা করে আদালতের কাছে এটিও প্রতীয়মান হয়, ভিকটিম মেয়েটি নিজের ইচ্ছায় তার পিতা-মাতার ঘর ত্যাগ করেছে এবং ফিরে আসার কোন ইচ্ছা তার মধ্যে আপাততঃ দেখা যাচ্ছে না, তাই তাকে জুডিশিয়াল হেফাজত থেকে মুক্তি দেয়া হলো। তিনি স্বেচ্ছায় যেখানে যেতে চান সেখানে যেতে পারেন, স্বামীর গৃহে কিংবা পিতা-মাতার বাড়িতে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি একজন বিজ্ঞ আইনজীবী এবং একজন উপযুক্ত স্থানীয় জামিনদারের জিম্মায় জামিনে থাকবেন।
অবশেষে মামলার অভিযোগ গঠনের সময় বিচারক মহোদয় এই মর্মে আদেশ দেন যে, আসামি উল্লেখিত ধারায় কোনো প্রকার অপরাধ সংঘটন করেনি। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের বিধান বর্ণিত ও দন্ডবিধি মতে, অপহরণ মামলার কোনো উপাদান এখানে বিদ্যমান নেই। তাই আসামির বিরুদ্ধে ওই মামলা চলতে পারে না এবং সে মতে আসামীকে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫ (গ) ধারা মতে অত্র মামলা দায় হতে অব্যহতি প্রদান করা হলো।
,
খারাপ দিকটা হচ্ছে:-
অল্প বয়সে ভালবাসার মূল্যায়ন দিতে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন অথচ, যে বাবা-মা আপনাদের আদর যত্নে এত বড় করেছে তাদের ভালোবাসা কি এতই তুচ্ছ?তাদের মতের কোন মুল্য নেই? কোন বাবা মা তাদের সন্তানের খারাপ চান না। প্রত্যেক বাবা মা'ই চান তাদের সন্তান প্রতিষ্ঠিত হোক পরে এমন কারো সাথে বিয়ে হোক যাতে সারা জীবন সুখে থাকে। আপনি যখন আপনার বাবা মাকে আপনার প্রেমের কথা বলেন যদি মানেন না তখন হয়তো ভাবেন তারা আপনার মতামতের গুরুত্ব দিচ্ছেন না অথবা তারা জোর করে তাদের পছন্দ আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে আপনি ভুল। বলতে পারেন কিভাবে? আগেই বলেছিলাম বাবা মা কখনই তাদের সন্তানের অমঙ্গল চান না, যখন আপনি আপনার প্রেমের কথা আপনার বাবা মা'কে বলেন প্রথমেই ভাবেন আপনি ভুল পথে পা বাড়াচ্ছেন না'তো?বাবা মা আপনার উজ্জল ভবিষ্যতের কথা ভাবেন, তাই ভাবেন এই প্রেম আপনার ভবিষ্যতের ক্ষতি করতে পারে। কারণ এখন পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়। বাবা মা'র ভালবাসায় কোন খাদ নেই বলে আপনার উজ্জল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আপনার প্রেমের সম্পর্কের বিষয় মেনে নেন না। শেষমেষ আপনি পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।
আচ্ছা আপনি কি ভেবে দেখেছেন পালিয়ে করে আপনার স্ত্রীকে কি খাওয়াবেন, পরাবেন, থাকবেন কোথায়? জীবন টা সিনেমার মত নয় যে, ভাড়ায় ঘর একটা পেয়ে যাবেন, রিক্সা কিংবা সিএনজি চালায়ে নায়িকা'কে খাওয়াবেন!
হয়'তো কোনো রকমে একটা বেবস্থা করে নিলেন। ছোটখাটো একটা কাজ নিলেন, কিন্তু পারবেন কি পড়ালেখা ও সংসার চালাতে? নাকি প্রেমের জন্য স্বপ্ন বিসর্জন দিবেন! আপনি ভুল যদি ভাবেন দুটোই আপনি একসাথে চালায় নিতে পারবেন। বিয়ে মানে এক বিছানায় শুয়ে কাটানো নয়, সেটা এক মহান কঠিন দায়িত্ব। বলবেন, আমরা মানিয়ে নিবো। কতদিন পারবেন মানায় নিতে? একটা কথা প্রচলিত আছে " অভাব যখন সংসারে দেখা দেয় তখন ভালবাসা জানলা দিয়ে পালায়!"
কেউ কেউ ভাবেন হয়ত একটা বাচ্চা নিয়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। সেটা সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত, তখন আপনার ভুলের মাশুল দিতে হতে পারে বাচ্চাটির।
মারাত্মক অনিশ্চয়তার মধ্যে পরবে বাচ্চাটির ভবিষ্যত। আর এর দায়ভার আপনারদেরই নিতে হবে। তাই যা সিদ্ধান্ত নিবেন ভালোভাবে নিবেন, আমি বলছিনা প্রেম করবেন না, করবেন তবে আগে মাথায় রাখবেন নিজের ভবিষ্যতের কথা। আগে প্রতিষ্ঠিত হোন পরে ভালবাসার কথা বলুন, বাবা মাকে ভালোভাবে বুঝায়ে বলুন আপনার ভালবাসার মানুষের সাথেই আপনি সুখে থাকবেন, একবারে হয়তো মানবে না বারবার চেষ্টা করুন। আমার বিশ্বাস বাবা মা মেনে নিবে। কারণ সন্তানের সুখই বাবা মায়ের কাছে সবচয়ে বড়। প্লিজ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েন না যার কারণে বাবা মা কষ্ট পায়। বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে এ জগতে কোন সন্তান সুখী হতে পারে না। আরেকটা কথা, ইতিহাসে অনেক উদাহরণ আছে যেখানে প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরকে পায়নি, তাই বলে কি ভালবাসা মরে গেছে। ভালবাসা শুধু অর্জনের জন্য নয়।
.
পাপ্ত বয়স্ক এবং স্বাভলম্বি হওয়া ছাড়া কোন ছেলের প্রেম করা এবং প্রেম করে বিয়ে করার কোন অর্থ নেই।তাই স্টুডেন্ট লাইফের মানুষদের উচিত এইসব থেকে দূরে থাকার কারন এইটা হচ্ছে কর্তব্যের অবহেলা,বাবা মা টাকা খরচ করে তোমায় পড়াচ্ছে একটা ভালো কিছুর জন্য আর তুমি মাঝ পথে এসে একটা ঘটনা ঘটিয়ে সব শেষ করেদিছো তোমার ভাবার উচিত ছিল কারো স্বপ্ন ভাঙ্গা কতটা নিছু কাজ আবার তা হচ্ছে মা বাবার যারা তোমায় জন্ম দিয়েছে এবং তাদের সাথে তোমার সম্পর্ক ১৫/১৬/১৮/২১বছরের আর এক জন অচেনা মানুষের সাথে অল্প কয়দিনের সম্পকর্কে তাদের সম্পর্ক এখন অর্থহীন বিরক্তিত।আরে ভাই মা-বাবা কি তাদের ছেলে/মেয়েকে নিয়ে ভাবে না,যখন তোমার সময় এবং বয়স হবে নির্চয় তোমায় বিয়ে দিবে এর ব্যতিক্রম কোথাও নেই কিন্তু আমাদের মাথায় এইটা আসে না।আর যারা সক্ষম হয়েছেন তারা প্রেম করতে চাইলে অবশ্যই বাবা মাকে জানিয়ে করবেন এতে পরিবারে অশান্তি আসবে না এবং আপনাদের প্রেম স্বার্থক হবে ।আর মা বাবরও উচিত ছেলে মেয়ের যুক্তিসংঙ্গত পছন্দ মেনে নেওয়ার।

Thursday, July 21, 2016

ফরিদপুরের 'নুলা মুসাই' এখন ঢাকার রহস্যে ঘেরা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী প্রিন্স মুসা-বিন-শমসের


প্রবীর সিকদার, ফরিদপুর থেকে।। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার মদনগোপাল আঙ্গিনার মেয়ে কমলা ঘোষ। বাবা অমূল্য ঘোষ লবণ ব্যবসায়ী। সবে বিয়ে হয়েছে কমলার। বাবার বাড়ি বেড়াতে আসতে না আসতেই একাত্তরের পঁচিশে মার্চের কাল রাতে শুরু হয় দেশব্যাপী পাকি সৈন্যদের হত্যাযজ্ঞ, তাণ্ডব। ফরিদপুরেই আটকা পড়ে যায় কমলা। একদিন পাকি মেজর আকরাম কোরায়শী ও তিন পাকি সেনা সহযোগে মদনগোপাল আঙ্গিনায় ঢোকে নুলা মুসা। কমলাদের ঘরে কমলাকে নিয়ে আদিম উল্লাসে ফেটে পড়ে পাকি সেনারা। সেদিন কমলার কোন আর্তনাদই পাকি দুর্বৃত্তদের মন গলাতে পারেনি। রক্তাক্ত ও অজ্ঞান কমলা পড়ে থাকে ঘরের মেঝেয়।
এক কান দু'কান করে এ ঘটনা জেনে যায় কমলার স্বামী। কমলাকে গ্রহনে অস্বীকৃতি জানায় স্বামী। আর স্বামীর ঘর হয়নি কমলার। লোকলজ্জায় একা একাই দেশ ছেড়েছে কমলা। বিদেশ বিভূঁইয়ে এবাড়ি-ওবাড়ি কাজ করে নিজেকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে কমলা, বাঁচিয়ে রেখেছে একাত্তরের বীভৎস স্মৃতি।

ফরিদপুর শহরের মহিম স্কুল সংলগ্ন ধর্মশালা দেখাশোনা করতো কেষ্টমণ্ডল। কেষ্টমণ্ডলের চার মেয়ে-ননী, বেলী, সোহাগী ও লতা। নুলা মুসার তত্ত্বাবধানে এই বেলী ও ননী মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় পাকি সৈন্যদের মনোরঞ্জনে বাধ্য হয়েছে। পরে এই চার বোন ও তাদের মা মাখনবালার ঠাঁই হয়েছিল ফরিদপুরের পতিতাপল্লীতে। বয়স বেড়ে যাওয়ায় সে ব্যবসাও এখন নেই। চার বোন এখন গোয়ালচামটের এক নিভৃত স্থানে অতীত ঢেকে কাটাচ্ছে এক মানবেতর জীবন। শুধু কমলা, ননী, বেলী নয়, পাকি সেনাদের হাতে অর্ধশতাধিক বাঙ্গালী মা-বোনের সম্ভ্রম লুটের প্রধান অনুঘটক হিসেবে একাত্তরে কাজ করেছিল কুখ্যাত এই নুলা মুসা। একাত্তরে পাকি 'দোস্ত' সেই নুলা মুসাই এখন ঢাকার রহস্যে ঘেরা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবারের নতুন আত্মীয়, স্বঘোষিত প্রিন্স, তথাকথিত 'ডক্টরেট' ডিগ্রির অধীশ্বর মুসা-বিন-শমসের।

এখন তার নাম প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসের হলেও সার্টিফিকেটে নাম এডিএম মুসা। মুসা-বিন-শমসের কিংবা এডিএম মুসা- কোন নামেই ফরিদপুরের মানুষ তাকে চেনে না। এক হাত খানিকটা বিকলাঙ্গ হওয়ায় তার ব্যাপক পরিচিতি 'নুলা মুসা' হিসেবেই। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার তথাকথিত পীর 'সাম্যবাদী তাপস শমসের বাঙ্গালী' ওরফে শমসের মোল্লার তৃতীয় পুত্র এই নুলা মুসা। মুসা পরিবারের আদি নিবাস ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসুতি ইউনিয়নের কাজীকান্দা-হিয়াবলদী গ্রামে। ১৯৬৮ সালে শহরের ঈশান স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল মুসা। ১৯৮৬ সালে মুসার নামের আগে 'ডক্টর' সংযুক্ত হলেও রেকর্ডপত্রে নুলা মুসা ওরফে এডিএম মুসা ওরফে প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসেরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশের কোন প্রমাণ মেলেনি কোথাও। আর তাই 'ডক্টরেট' ডিগ্রিটাও তার মতো রহস্যেঘেরা। বাকপটু মুসার ছিল ইংরেজি ও উর্দু কথোপকথনে পারদর্শিতা। বয় স্কাউটের ডিস্ট্রিক্ট লিডার হিসেবে সে পাকিস্তানের করাচী থেকে একাধিক পুরস্কারও পেয়েছে। সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মাইকিং কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখলেও মুসার ছিল শক্ত পাকি কানেকশন। অভিযোগ আছে, একাত্তরের ২১ এপ্রিল পাকি সৈন্যদের ফরিদপুরে ঢোকার ব্যাপারে মানচিত্র ও পথনির্দেশনা দিয়ে নেপথ্যে সহযোগিতা করেছে এই মুসা। তার প্রমাণ পাওয়া যায় পাকি মেজর আকরাম কোরায়শীর সাথে মুসার গভীর ঘনিষ্ঠতায়। ফরিদপুরে পাকি সৈন্য ঢোকার পরদিন অর্থাৎ একাত্তরের ২২ এপ্রিল ফরিদপুর সার্কিট হাউসে মেজর আকরাম কোরায়শী ও নুলা মুসাকে দেখা যায় খুবই অন্তরঙ্গ পরিবেশে। সেদিন এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন মুক্তিযোদ্ধা একেএম আবু ইউসুফ সিদ্দিক পাখী।

মেজর আকরাম কোরায়শীর সাথে গভীর সম্পর্কের কারনে মুসা একাত্তরে হয়ে উঠেছিল এক মূর্তিমান আতঙ্ক। মুসার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় পাকি সেনা, রাজাকার-আলবদর তথা পাকি দোসররা একাত্তরে নৃশংসভাবে খুন করেছিল শহরের মদনগোপাল আঙ্গিনার চন্দ্রকান্তনাথ, গৌরগোপাল আঙ্গিনার বিজয় মজুমদার, টেপাখোলার কবির আহমেদ চৌধুরী, গুড়বাজারের শেখ মোঃ আবু আব্দুল্লাহ দুলাল, খোদাবক্স রোডের অপরেশ সাহা, ভোম্বল সাহা, বৈদ্যনাথ সাহাসহ অগণিত মুক্তিপাগল জনতাকে। একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, লুটপাটে মুসার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল মজিদ বিহারী, আবুল বিহারী, কালু বিহারী, মানিক বিহারী, চান্দা, ভেটকা, আয়নাল, আইয়ুব, অনু, পান্নু, চন্দন, রবি, আহমেদ মৌলানা ওরফে হাম্মাদ মৌলানাসহ অর্ধশতাধিক পাকি দোসর। নুলা মুসা ও তার সহযোগীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একাত্তরে পাকি সেনা ও রাজাকার-আলবদররা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় সাবেক সংসদ সদস্য শহরের ইমাম উদ্দিন আহমাদ, নিত্যানন্দ কবিরাজ, সুখেন্দু রায়, মুক্তিযোদ্ধা আজাদ সিদ্দিকী, অহিভূষণ পোদ্দার, ধীরেন সাহা, চন্দ্রকান্তনাথ, নিমাই সাহা, পুটে সাহা, কৃষ্ণপদ সাহা, কৃষ্ণ বিশ্বাস এবং হরেন সাহার বাড়িসহ রথখোলা, লাহিড়ীপাড়া, ওয়্যারলেসপাড়া, শোভারামপুর ও বিভিন্ন মহল্লার সহস্রাধিক বাড়িতে। রথখোলা দত্তবাড়ি লুটপাটের আরেক নায়ক ফরিদপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিল। মোটর পার্টসের দোকান লুটকারী এ লুটেরাবাহিনী শহর এলাকার বাইরে মুন্সীবাজার, কৈজুরী, ঈশান গোপালপুর, তালমা, ভবুকদিয়া, কাজীকান্দাসহ অসংখ্য জনপদে চালিয়েছে তাণ্ডব। শহরের লাহিড়ীপাড়ায় যখন লুটপাট-তাণ্ডব চলছিল তখন পাকি মেজর আকরাম কোরায়শীর সাথে ছিল মুসা। সেদিনের যুবক, আজকের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপককে লাহিড়ীপাড়া থেকে মুসার ইঙ্গিতে পাকি সেনারা সেদিন ধরে নিয়ে যায় সার্কিট হাউসে। পরে অনেক দেনদরবারের পর প্রাণে বেঁচে যান তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের ব্যাংক ব্যবস্থাপক একাত্তরে নুলা মুসার তাণ্ডবের বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউরে ওঠেন। মেজর আকরাম কোরায়শীসহ অনেক পাকি সেনা সদস্যের অবাধ যাতায়াত ছিল মুসার বাড়িতে। মুসার পিতা তথাকথিত পীর শমসের মোল্লা পাকি সেনাদের মনোবল বাড়াতে তাদের গায়ে ফুঁ দিত আর বলত-'ইন্ডিয়া পাকিস্তান বন জায়গা।'

শহরের একটি পরিবারের তিন বোনকে মুসা মাঝেমধ্যেই মিলিটারি জীপে তুলে নিয়ে যেত সার্কিট হাউসে পাকি মেজরের আস্তানায় গান শোনাতে। পরে পাকি ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি বোন তিনটির বাবা। তাঁকেও নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। ফরিদপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ শহরের সব শহীদ মিনার মুসা পাকি সেনাদের দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। পাকি সেনারা তালমার অমূল্য কুণ্ডু ও কার্তিক সাহার বাড়ি থেকে লুট করে এনেছিল ৮ মণ পরিমাণ সোনা। কথিত আছে, এ বিপুল পরিমাণ সোনা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা পাকি সেনারা তালমাকে পূর্বপাকিস্তানের 'রাজধানী' আখ্যা দিয়েছিল। পাকি সেনারা ব্যাংক থেকেও বিপুল পরিমাণ টাকা ও সোনা লুট করেছিল। অভিযোগ রয়েছে, তালমার সোনা লুট ও ব্যাংক লুটের ঘটনার সাথে জড়িত ছিল নুলা মুসা তথা আজকের প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসের।

একাত্তরে এই কুখ্যাত মুসার মূল ভূমিকাটি ছিল পাকি সেনাদের নিত্য সহচর হিসাবে ঘাতকদের সকল অপকর্মের পথ নির্দেশনা দেয়া। পাকি মেজর আকরাম কোরায়শী মুসাকে বলত 'দোস্ত'। দেশ স্বাধীন হবার পর ডিসেম্বরেই পাকি দোস্ত নুলা মুসা মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে ফরিদপুর থেকে পালিয়ে চলে যায় পাবনায়। সেখানে বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে বিয়ে করে ঢাকা ও চট্রগ্রামে ছোটাছুটি করে।
এমন অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার এক অবাঙালীকে পাকিস্তানে পাঠানোর নাম করে সে তার সহায়সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে একপর্যায়ে ঢাকায় শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি আদম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলে। বিদেশে লোক পাঠানোর নামে উত্তরবঙ্গের ২/৩শ' লোকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে মুসা বিদেশে উধাও হয়ে যায়। বছর তিনেক পর ঢাকায় ফিরে এসে DATCO নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে আবার শুরু করে আদম ব্যবসা। পাশাপাশি চলে অস্ত্র ও অবৈধ হুণ্ডির ব্যবসা। এরশাদ আমলে তৎকালীন ফার্স্ট লেডিকে 'ডক্টরেট' খেতাব এনে দিয়ে লাইমলাইটে চলে আসে নুলা মুসা ওরফে আজকের প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসের। আর পিছনে ফিরতে হয়নি মুসাকে। বিত্তবৈভবে শুধুই সামনে এগিয়ে চলা, শুধুই রাজকীয় জীবনযাপন করা। সূত্রটি জানায়, মুসা ১৯৮৭ সালে কোরীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান DONGHA COMPANY-এর মাধ্যমে লিবিয়ায় লোক পাঠিয়েছিল। এজন্য কমিশন বাবদ মুসার কাছে কোরীয় কোম্পানিটির পাওনা হয়েছিল প্রায় দু'কোটি টাকা। এই পাওনা পরিশোধ নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। দেশের বা বিদেশের প্রতারিতরা মুসার বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি করতে পারে না। কারণ মুসা সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর পুত্রের সাথে নিজের কন্যার বিয়ে দিয়ে প্রভাব, প্রতিপত্তি ও দাপটের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকার চাঞ্চল্যকর আয়কর মামলাটিও হিমাগারে চলে গেছে। ব্রিটেনের লেবার পার্টিকে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসের দেশী-বিদেশী অনেক জাঁদরেল সাংবাদিককেও ভুয়া তথ্য দিয়ে আত্মপ্রচারের মাধ্যমে প্রতারিত করেছে, বোকা বানিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। সর্বশেষ মুসা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্তির অপচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।

মুসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর বিষয়ে পুঙ্খানুপঙ্খ তদন্ত দাবি করে একাত্তরে নুলা মুসার অনেক অপকর্মের সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা ও বাস শ্রমিক একেএম আবু ইউসুফ সিদ্দিক পাখী বলেন, পাকি সেনাদের নিত্যসহচর কুখ্যাত মুসার মতো পাকি দোসরদের স্বরূপ উন্মোচন করতে একমাত্র জনকণ্ঠই পারে, জনকণ্ঠই পারবে। একাত্তরের ডিসেম্বরে ফরিদপুর থেকে পালিয়ে আসা মুসা আর দিনের আলোয় ফরিদপুরে ঢুকতে পারেনি-এ কথার উল্লেখ করে পাখী বলেন, সে দিন বেশি দূরে নয় যেদিন একাত্তরের ঘাতক-দালাল পাকি দোসরচক্র ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের অর্জন প্রিয় বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে।

স্যার বাসায়, স্যার বিদেশে !
জনকণ্ঠের এ প্রতিবেদক মুসা-বিন-শমসেরের সাথে কথা বলতে ফরিদপুর থেকে টেলিফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেন তার ঢাকাস্থ বনানীর ড্যাটকো অফিসে ও গুলশানের বাসায়। ড্যাটকো অফিস থেকে এক ব্যক্তি জানান, স্যার বাসায়। বাসায় টেলিফোন করা হলে এক মহিলা বার বার প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান। জনকণ্ঠের পরিচয় দিতেই মহিলাটি রিসিভার রেখে দেন। একই নম্বরে আবার টেলিফোন করা হলে মহিলাটি নিজেকে টেলিফোন অপারেটর পরিচয় দেন, নাম বলেন ফাহিমা। মুসা-বিন-শমসেরের সাথে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলে মহিলাটি 'স্যার বিদেশে গেছেন' এ কথা বলেই রিসিভার রেখে দেন। আবার ড্যাটকো অফিসে যোগাযোগ করা হলে এক ব্যক্তি 'স্যার বিদেশে, কবে ফিরবে জানি না'-এ কথা বলেই রিসিভার রেখে দেয়।

জনকণ্ঠ।। ২৪-০৩-২০০১
- See more at: http://m.u71news.com/article/49053/index.html#sthash.A0quEu6W.dpuf