Friday, June 3, 2016

আবেগের তাড়নায় ‪কোর্ট ম্যারেজ‬! তারপর...?

বিবাহ একটি পবিত্র কাজ। যা সামাজিক ভাবে স্বীকৃত। বিবাহ হলো একটি সার্বজনীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান। বিবাহ হলো সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্ম কর্তৃক অনুমোদিত এমন এক চুক্তি যার মাধ্যমে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা একত্রে বসবাস করার চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকে আবেগে পারিবারিক সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলেন। কিন্তু কোর্ট ম্যারেজেই কি সবকিছু বহন করে?
কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনো কিছু আইনে নেই। যুবক-যুবতী বা নারী-পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে বসবাস করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা সম্পাদন করে থাকে, তাই কোর্ট ম্যারেজ নামে পরিচিত। এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এই রূপ কোন বিয়ে যদি কাজী অফিসে রেজিষ্ট্রী না করা হয় তাহলে আইনগত কোন ভিত্তি থাকবেনা। কোন এক সময় যদি এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ত্যাগ করে তাহলে আইনগত কোনো প্রতিকার পাবেনা।
পঞ্চাশ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা একশত পঞ্চাশ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে বিয়ে বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র। আইনানুযায়ী কাবিন রেজিষ্ট্রী ও আকদ সম্পন্ন করেই কেবল ঘোষণার জন্য এফিডেভিট করা যাবে।
আবেগঘন সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক তরুণ তরুণীর ভুল ধারণা হয় যে, শুধুমাত্র এফিডেভিট করে বিয়ে করলে বন্ধন শক্ত হয়। কাজী অফিসে বিয়ের জন্য বিরাট অঙ্কের ফিস দিতে হয় বলে কোর্ট ম্যারেজকে অধিকতর ভাল মনে করে তারা।
যদি কাবিন রেজিষ্ট্রী করা না হয় তাহলে স্ত্রী মোহরানা আদায় করতে ব্যর্থ হবে। অধি;কিন্তু আইন অনুযায়ী তার বিয়ে প্রমান করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। তাই এই ক্ষেত্রে সঙ্গী কর্তৃক প্রতারিত হবার সম্ভাবানাই অধিক।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন, ১৯৭৪-এর ধারা ৫(২) অনুযায়ী যে ক্ষেত্রে একজন নিকাহ রেজিস্টার ব্যাতীত অন্য ব্যক্তি দ্বারা বিবাহ অনুষ্টিত হয় সে ক্ষেত্রে বর বিবাহ অনুষ্টানের তারিখ থেকে পরবর্তী (৩০) ত্রিশ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্টারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
ধারা ৫(৪) অনুযায়ী অত্র আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে দুই বছর পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

হিন্দু আইনে কী বলা আছে ?
হিন্দু বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই হিন্দু আইনের প্রথা মেনেই বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। কেননা হিন্দু বিয়েতে এখন পর্যন্ত বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। হিন্দু বিয়েতেও নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে প্রাপ্ত বয়সী ছেলেমেয়ে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দিয়ে থাকে মাত্র; যা পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বিয়ের হলফনামা একটি দালিলিক প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। প্রচলিত হিন্দু প্রথা না মেনে হলফনামা করা হলে এতে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল বলা যাবে না।
তাই বিবাহের ঘোষণা প্রদান করার ৩০ দিনের মধ্যে বিবাহ রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। অন্যতায় প্রতারিত হলে আইনি কোন প্রতিকার পাওয়া যাবেনা।

0 comments:

Post a Comment