Sunday, November 6, 2016

হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই!

কয়েকদিন যাবত ফেসবুকে অামার হিন্দু ধর্মাবলম্বী কতিপয় বন্ধুদের প্রোফাইল ছবিটি কালো দেখে অামি নিজেও লজ্জায় কালো হয়ে যাচ্ছি। তারা একটি ঘৃন্য, জগন্য কর্মকান্ডের প্রতিবাদ হিসেবে এটি করছেন। অাসলে ফেসবুকে অামার অনেক হিন্দু বন্ধু রয়েছে যাদের সাথে অামার ভালো একটি সম্পর্ক রয়েছে। শুধু ভার্চুয়াল জগতে নয় বাস্তব জীবনে অামার ঘনিষ্ট বন্ধুদের তালিকায় রয়েছে অসংখ্য হিন্দু বন্ধু। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত কখনও তাদেরকে হিন্দু হিসেবে বা সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করিনি। অামার হিন্দু বন্ধুরাও কখনও অামাকে মুসলিম হিসেবে অালাদা করেনি। একসাথে খাই-দাই-ঘুমাই-ঘ
োরাফেরা করি-ফুর্তি করি অারও কত কি! ছাত্র জীবনে যেমন অনেক হিন্দু বন্ধু পেয়েছি তেমনি কর্ম জীবনেও অামার অনেক হিন্দু সহকর্মী রয়েছেন যারা সত্যিকার অর্থেই অসাম্প্রদায়ীক চেতনার সাদা মনের মানুষ। এইতো গত ৩ তারিখে অামার জন্মদিনে পার্টি দিলেন অামার এক হিন্দু সহকর্মী। গতবছরও অামার জন্মদিনে সবাইকে অবাক করে বিশাল এক পার্টির ব্যবস্থা করেছিলেন অামার এক হিন্দু সহকর্মী। তাঁদের ওইসব অায়োজন অামাকে সত্যিই অবাক করে দিয়েছিল। অামি মুগ্ধ হয়েছিলাম। ছাত্র জীবন শেষে কর্ম জীবনের ৫ টি বছর হিন্দু-মুসলিম মিলে একসাথে কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু একটিবারও মনে হলো না অামরা কেউ মুসলিম বা কেউ হিন্দু। হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই হিসেবেই অামরা চলছি। সম্প্রতি ব্রামণবাড়িয়ায় যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা সত্যিই দুঃখজনক এবং লজ্জা জনক। একজন মুসলিম হিসেবে এটা অামার লজ্জা, অামার ব্যর্থতা। কারণ ইসলাম ধর্ম কখনও সহিংসতাকে সমর্থন করেনা। শুধু ইসলাম কেন কোনো ধর্মই তো খারাপ কাজকে সমর্থন করেনা। প্রকৃতপক্ষে ধর্ম সম্পর্কে যারা অজ্ঞ, মূর্খ তারাই এসব ঘৃনিত কর্মকান্ডগুলা ঘটাচ্ছে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করাও একধরনের মূর্খতা। অামার গ্রামের বাড়ির পাশের ঘরটি হিন্দু। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি অামাদের পরিবারের সাথে তাদের এক অসাধারণ ঘনিষ্ট সম্পর্ক। তাদের পূঁজা-পার্বনে সর্বপ্রথম নিমন্ত্রণটা অাসে অামাদের ঘরে। অামরাও ঠিক একই রকম। অামার বাবা ছিলেন একজন অালেম। এক মসজিদে ইমামতি করেছেন একটানা ৩০ বছর। জীবদ্দশায় ধর্ম প্রচার করে গেছেন নিরলসভাবে। কিন্তু ধর্মের নামে ভন্ডামি অার সহিংহসতার প্রতিবাদ করেছেন কঠোরভাবে। বাবা হজ্ব শেষে ফিরে এসে সৌদি অারব থেকে নিয়ে অাসা খেঁজুরের প্যাকেটটি প্রথম হিন্দু বাড়িটিতেই পাঠিয়েছিলেন।
যাই হোক, ইদানিং ব্রাম্মণবাড়িয়ার ঘটনা নিয়ে একজন মুসিলম হিসেবে অামি অামার হিন্দু বন্ধুদের কাছে লজ্জিত, দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।
অাবারও বলতে চাই-
হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই
মিলে-মিশে থাকতে চাই।

লেখক জসিম উদ্দিন,
প্রভাষক, বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ, হবিগঞ্জ।
facebook.com/jashimsly

0 comments:

Post a Comment