Wednesday, June 1, 2016

প্রসঙ্গঃ জিপিএ ফাইভ অনুভূতিতে আঘাত

টিভিতে কোন ধর্ষণ-নির্যাতন-নিগ্রহ-অসম্মানের স্বীকার মানুষের মুখ ব্লার বা ঝাপসা করে দেয়া প্রচলিত সাংবাদিকতা নৈতিকতা। কিন্তু “সফল যারা কেমন তারা” বা জিপিএ ফাইভ পাওয়া “বিজয়ী”-দের চেহারা ঝাপসা করতে হবে কেন! কেউ কোন কিছু না জেনেও সফল হয়েছে; এমন মুখ ঝাপসা করে দিতে হলে তো টকশো’র অনেক আলোচকের চেহারা বা অসংলগ্ন পরস্পরবিরোধী কথা বলা নীতি নির্ধারক ও রাজনীতিকদের চেহারাও ঝাপসা করে দেয়া উচিত। কত মুখ ঝাপসা করবে টেলিভিশন!
পশ্চিমা বিশ্বে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ওদের গড়পড়তা নাগরিকদের সাধারণ জ্ঞানের অভাব তুলে ধরতে ভক্স পপ বা জন সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়। এর মাধ্যমে সমাজ তার বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যের কথা জানতে পারে। তবে ওদের সমাজের সুবিধা চট করে কেউ হেয় করে না বা কেউ হেয় বোধ করে না। কারণ বাস্তবতাকে আড়াল করে রাখলে জাতিগতভাবে ভবিষ্যতে হেয় হবার আশংকা থাকে। আর বিজয়ী জিপিএ ফাইভদের হেয় করবে কারা;কোন মুখে! তাদেরও তো জ্ঞানের বহর একই; কিংবা তাদের আত্মকেন্দ্রিকতা ও অমনোযোগেই তো আমাদের সম্ভাবনাময় শিশুদের কাংক্ষিত বিকাশ সম্ভব হয়নি।
আর শিশুদের আবার কলংক কী! যেমন বীজ বোনা হবে তাদের মস্তিষ্কে; তেমনই ফসল ফলবে। কলংক শিক্ষা খাতকে অবহেলা করেছে যারা তাদের। ব্লার না করেই বাংলাদেশের সমস্ত শিক্ষামন্ত্রীর চেহারা যুগে যুগে টিভিতে দেখানো হয়েছে। তাতেও তাদের সম্বিত ফেরেনি। আর এরকম দৈবচয়নে ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষার চল দেশে দেশে টিভিতে রয়েছে। বাস্তবতাকে ঢেকে না রেখে তুলে ধরলে তাতেই বরং শিশুদের উপকার হবে বলে মনে হয়। তাই অনুভূতিপ্রবণ কোমল সমাজের সবসময় ধামাচাপা দিয়ে সত্য লুকিয়ে রাখতে বাধ্য করার গ্রামীণ সামাজিক চাপটি জাতির সামষ্টিক আগামীর জন্য আত্মঘাতী প্রবণতা হিসেবে দৃশ্যমান।
লেখক : মাসকাওয়াথ আহসান
প্রবাসী, কলামিস্ট ও সাংবাদিক।

0 comments:

Post a Comment