Monday, April 25, 2016

সদরে আ'লীগের ভরাডুবি! দায়ভার কে নিবে?

বানিয়াচং,আওয়ামিলীগের ঘাঁটি বলে হবিগঞ্জ জেলায় পরিচিত। সাবেক সংসদ সদস্য শ্রদ্ধাভাজন জনাব আলী চাচা ছাড়া ধানের শীষের কোনো প্রার্থী স্বাধীনতার পরে বানিয়াচং এর কোনো আসন দখল করতে পারেননি। ৯৬' থেকে বর্তমান অব্দি মোট চারটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। চারটি ধাপেই আ'লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য দিনদিন আ'লীগের কোন্দল বাড়ছে আর এর ফল ভোগ করছি আমরা সাধারণ সমর্থকরা। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের ভরাডুবির যাত্রা শুরু। এবং এই ভরাডুবি বিরতিহীন ভাবে চলছেই। সর্বশেষ তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত দলীয় প্রতীকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বানিয়াচং সদরে আওয়ামীলীগের অবিশ্বাস্য ভরাডুবি নাড়িয়ে দিয়েছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে। দলীয় কোন্দলের কারণে সদর তিনটি ইউনিয়নের দুটিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। যার খেসারত ২৩ এপ্রিলের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পেয়েছে। কিন্তু এই ভরাডুবির কারণ কী! শুধু কি দলীয় অনৈক্য না অন্য কিছু?
একটু পিছনে তাকানো যাক! ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস,মার্চ মাসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। দফায় দফায় বৈঠক করেও সমঝোতা করা যায় নি। স্বয়ং মান্যবর সংসদ সদস্য (হবিগঞ্জ-২) এডভোকেট আব্দুল মজিদ খানও পারেননি বিদ্রোহীদের বসাতে। এমপি মহোদয়ের আহ্বান উপেক্ষা করে মোট পাঁচজন প্রার্থী হলেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য। একজন (আমীর হোসেন-সভাপতি, উপজেলা আ'লীগ) ৪৫ বছর রাজনীতি করে পেয়েছিলেন মাত্র ২২ হাজার ১১৪ ভোট, অন্যজন (ইকবাল হোসেন খান) বর্তমান চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায়ও পেয়েছিলেন মাত্র ১৭ হাজার ৪৮২ ভোট , ১০নং সুবিদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পেয়েছিলেন ২৪ হাজার ৩৪০ ভোট, কৃষক লীগ নেতা হুমায়ূন কবির রেজা পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৪২১ ভোট আর জাসদ ছাত্রলীগের নেতা সাদিকুল তালুকদার পেয়েছিলেন মাত্র ১ হাজার ১৮২ ভোট। উনারা পাঁচজনই এক জোটের। কেউ কাউকে ছাড় দেননি। যার ফলাফল কি দাড়িয়েছিল তা আপনাদের জানা। পাঁচজনের একজনও গদিতে বসতে পারেননি। উপজেলা পরিষদের নির্বাচন থেকে শুরু দলীয় ঐক্য ভাঙন আর তা এখনও চলমান। যার প্রমান বানিয়াচং সদরে সদ্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মিলেছে। সদর ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়ন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল বানিয়াচং উপজেলা আ'লীগের কার্যকর কমিটির সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে। ৬২৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন তিনি। মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আরো দুজন,তারা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহিবুর রহমান ও আওয়ামীলীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান এডভোকেট নজরুল ইসলাম খান।
এই দুই জনপ্রিয় মানুষদের রেখে মিজানুর রহমানকে কেন দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, 'মনোনয়ন দেওয়া বিষয়টি উড়ে এসে জুড়ে বসার মত।' হাই কমান্ডের নির্দেশে দুই প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও সেচ্ছাসেবক লীগের তুখোড় নেতা প্রভাষক খাইরুল বাসার সোহেল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। নির্বাচক মন্ডলীরা বলছেন, একজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণেই সদর ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের এই ভরাডুবি; সাথে তো দলীয় কোন্দল আছেই। জনমনে এখন প্রশ্ন, তাহলে কী যোগ্য প্রার্থী রেখে অযোগ্য প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল, না যোগ্য প্রার্থীই দল মনোনীত করেছিল। তাহলে তিনবারের নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধির এই ভরাডুবি কেন?
প্রচার প্রচারণার কমতি ছিল না। লিফলেট বিতরণ, নিয়মিত মাইকিং, উঠান বৈঠক, মোটর সাইকেল শোডাউন সবই তো সমান তালে হয়েছিল। তারপরও ৬২৮ ভোটের ব্যবধান!
তাহলে এই ব্যর্থতার দায় কে নিবে?
এবার আসা যাক সদর ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নে! এখানে প্রায় ৭০৫ ভোটের ব্যবধানে ভরাডুবি। ছ'বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যানের এই ভরাডুবির কারণ কী! দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রচারণার কমতি ছিল না। মিছিল, মিটিং, বৈঠক সবই সমান তালে চলার পরও এই ভরাডুবির দায়ভার কে নিবে!!
এখানে তো কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল না! তাহলে নির্বাচনী সমীকরণে ৭০৫ ভোটের ব্যবধান কেন?
স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি কি এভাবেই পরাজিত হওয়ার কথা ছিল!
সদর ৩নং দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদে একই অবস্থা! শুরুতেই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চলে জল্পনা কল্পনা। শেষ পর্যন্ত আরফান উদ্দিনকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থীর দেখা মিলেছিল ওই ইউনিয়নে। দলীয় হাইকমান্ড অমান্য করে মোহাম্মদ আলী কিভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন? বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সদর ৩নং দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়নে সদর ১নং উত্তর-পূর্ব এর মতই ভরাডুবি হয়েছে। মাত্র ৩৬ ভোটের জন্য ছিটকে গেছেন জয়ের দ্বার প্রান্ত থেকে। নির্বাচক মন্ডলীরা বলছেন, প্রার্থী নির্বাচনে আরেকটু সচেতন হলে হয়তো ফলাফলে পরিবর্তন আসত!
সদর ১,২ এবং ৩ নং ইউনিয়নে এই ভরাডুবি সদরের প্রতিটি মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে; আহত করেছে বিবেকবান মানুষদের হৃদয়; হতাশায় পড়েছে পড়েছে স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি!
বহিষ্কার করা ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ কী দল থেকে নেওয়া যায় না! দলের নীতিমালা আরো কঠোর করা সময়ের দাবী। সদরে ধারাবাহিক ভাবে আসন্ন নির্বাচন গুলোতে ভরাডুবি চলতে থাকলে আওয়ামীলীগ একসময় সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়বে। সদরের ৪নং দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনিয়নের নির্বাচনের বাকী আর কয়েক সপ্তাহ।
আসন্ন নির্বাচনেও কি ভরাডুবির সম্ভাবনা রয়েছে! দলকে আরো সচেতনভাবে কাজ করতে হবে,
নতুবা ভরাডুবির সম্ভাবনা তো রয়েছেই।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত, বানিয়াচং উপজলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটিতে পরিবর্তন আনা হোক। নতুন নেতৃত্ব আনা হোক। নতুনদের সুযোগ দেওয়া হোক আর অকার্যকর পুরনোদের চিহ্নিত করে অবসরে পাঠানো হোক। তাহলেই রাজনৈতিক সংস্কৃতির জয় হবে। কারণ আ'লীগ অস্প্রদায়িক চেতনা লালন করে। বানিয়াচং উপজেলায় নির্বাচিত সকল জনপ্রতিনিধিকে শুভেচ্ছা। 

লেখকঃ অভ্র আজহার
ব্লগার এণ্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট।
http://avraazhar.blogspot.com/
facebook.com/avra.azhar
E-mail: avra.azhar@gmail.com 
প্রকাশকালঃ ২৫.০৪.২০১৬ইং।

1 comment: