Wednesday, May 11, 2016

গুঞ্জনে কান দিবেন না!

'পথ হারাবেনা প্রিয় আইডিয়েল কলেজ'
গেল মাসের ২৩ এপ্রিলের পরপরই একটা, দুইটা বা তারও অধিক লোকমুখে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সেই গুঞ্জনটি কি? তাহলে বলেই ফেলি অপেক্ষমাণ গুঞ্জনটি। সদ্য অনুষ্ঠিত বানিয়াচং উপজেলা সদর ১নং উত্তর-পূর্ব এবং ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই হেভিয়েট প্রার্থী পরাজিত হওয়ায় বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ বিপাকে পড়বে; আর কোনো উন্নয়ন হবে না; কলেজের শিক্ষার মান কমে যাবেসহ নানা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে কিছু মূর্খ ও নিন্দুকেরা!
আহা! আমার প্রিয় ক্যাম্পাস নিয়ে এত বড় মিথ্যা গুঞ্জন! আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না...!
আসুন, আপনাদের একটা গল্প বলি-
'একজন শিক্ষিত ছেলে পণ করলো, তাঁর এলাকার প্রতিটি শিশুকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলবে, তাদের মানবিকতার আলো দেখাবে। যেই ভাবা, সেই কাজ। কাছের বন্ধু-বান্ধব, নিকটাত্মীয় ও সৃজনশীল মন-মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের সহযোগিতায় কাজ শুরু করে দিলো ছেলেটি। শুরুতে কিছু হোঁচট খেলেও পরে সবকিছু সামলে নেয়। ছেলেটি তার নব্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির নাম দেয়, " আদর্শ শিশুনিকেতন।" খুব ভালো ভাবেই চলছিল তার একান্ত প্রচেষ্টার কার্যক্রম। কিন্তু; বছর তিনেক যেতে না যেতেই এলাকার কিছু নব্য শিক্ষিতরা(!) তার কার্যক্রমকে বাধা দিতে থাকলো। হিংসার বশবর্তী হয়ে ছেলেটিকে খোলা মাঠে নিয়ে বেধড়ক নির্যাতন করে নব্যশিক্ষিতরা! তার ফলে ছেলেটির দুটি হাত ও একটি পা আজীবনের জন্য অবশ হয়ে যায়! হাসপাতালের কেবিনে শুয়েও ছেলেটি তার প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা করতে থাকে। বাস্তবতার কাছে সে পরাজিত হলেও পরাজিত হয় নি তাঁর লালিত স্বপ্ন। শহর থেকে গ্রাজুয়েট করা কিছু মানুষ তাঁর সন্তানের মত প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেয়। পর্যায়ক্রমে ব্যক্তিগত উদ্দ্যেগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রতিষ্ঠানটি রূপ নেয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে। শিশুনিকেতনটি চলতে থাকে যুগযুগ; শতাব্দীর পর শতাব্দী।'
এখন আসি মূল পর্বে। বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ। যে কয়েকজন ব্যক্তির হাত ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি বেড়ে উঠেছে তাদের অন্যতম দুজন হচ্ছেন হায়দারুজ্জামান খান (ধন মিয়া) এবং মিজানুর রহমান খান। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর সৎ ইচ্ছার কারণে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলছে আপন মনে। অনেক সমালোচক মনে করছেন, তাঁদের নির্বাচনী পরাজয়ে প্রভাব পড়বে বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজের ওপর। কিন্তু; নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে বলতে চাই আপনাদের ইচ্ছা কখনো পূর্ণ হবে না। কলেজ চলছে ও চলবে তার নিজস্ব গতিতে। বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় ২০১১ সালে। সূচনালগ্ন থেকেই এই কলেজটির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত উপরে উল্লেখিত দুই সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁদের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় উত্তর বানিয়াচংয়ে কলেজের ভিত তৈরী হয়। এ পর্যন্ত সফলতার সাথে দুটি ব্যাচ কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়েছে; তৃতীয় ব্যাচটি পরীক্ষা দিচ্ছে, কিছুদিন পর ফলাফল প্রকাশ হবে। যারা কলেজের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ব্যঙ্গার্থ করছেন তাদের বলছি, কান খুলে শুনুন।
কলেজ যেমন ছিলো, তেমনি চলবে।
আইডিয়েল কলেজ হারতে শেখেনি; আইডিয়েল কলেজ হেরে যেতে পারে না নিন্দুকদের কথার কাছে।
আমাদের মূল শক্তি আমাদের প্রিয় শিক্ষকরা। তাঁদের অক্লান্ত শ্রম ও মায়ামমতা আছে বলেই আমরা নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারছি। সূচনালগ্ন থেকে যারা এখন পর্যন্ত আছেন তাঁরা সবাই ফ্রি সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি; আমার প্রিয় শিক্ষকরা নিজের টাকা খরচ করে হবিগঞ্জ থেকে আমাদের পড়াতে আসেন। বিনিময়ে কিছুই আশা করেন না। একটা জিনিসই আশা করেন। সেটা হলো আমাদের বানিয়াচংবাসীকে শিক্ষাদীক্ষায় আলোকিত করা। তাঁরা পাঁচ বছর ধরে আলো ছড়াচ্ছেন। এই আলো কেউ নেভাতে পারবেনা।
চ্যালেঞ্জ! চ্যালেঞ্জ!!
আশার কথা হচ্ছে, বানিয়াচং তথা সিলেটের কিংবদন্তি শিক্ষক প্রিয় স্বপন কুমার দাশ প্রিন্সিপাল হিসেবে এই কলেজে এখনো রয়েছেন। এটাই তো আমাদের প্রেরণার স্থান; আর কি দরকার! প্রিয় স্বপন স্যারকে সহযোগিতা করার জন্য তো অন্যান্য স্যার-ম্যাডামরা আছেনই তো। এই লেখা পড়ে হয়তো নিন্দুকেরা ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়ারই তো কথা!
কারণ আমরা আছি না, সাবেক হয়েছি তো কি হয়েছে!
আমার প্রিয় ক্যাম্পাস থেমে থাকবেনা। অন্যান্য কলেজের মতই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তারুণ্যে ভরপুর সকল শিক্ষকদের উপস্থিতি সব সমালোচনা ভুলিয়ে দেয়। কারণ আমাদের আছেন প্রিয় পূর্ণিমা রাণী ভট্টাচার্যের মত প্রত্যয়ী শিক্ষক। আরো আছেন বাংলা প্রভাষক প্রিয় মাকসুদা ফয়জুন্নেছা মান্না ম্যাডাম, জীববিজ্ঞান প্রভাষক প্রিয় অরুপ কুমার স্যার, অর্থনীতি প্রভাষক প্রিয় রনজিত কুমার দাস স্যার, পদার্থবিজ্ঞান প্রভাষক প্রিয় লক্ষণ স্যার, সমাজবিজ্ঞান প্রভাষক প্রিয় মিতালী খূর ম্যাডাম, গণিত প্রভাষক প্রিয় ডি.কে. দাস দিজয় স্যার, হিসাববিজ্ঞান প্রভাষক প্রিয় ঋষিকেশ স্যার, রসায়ন প্রভাষক প্রিয় রোমানা বিথী ম্যাডাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রভাষক প্রিয় আমিরুল ইসলাম স্যার, ব্যবস্থাপনা প্রভাষক প্রিয় মিলি আলাউদ্দিন ম্যাডাম, আইসিটি প্রভাষক প্রিয় শুভ্র স্যারসহ ফিন্যান্স প্রভাষক প্রিয় আজিজুল হক জনি স্যার।পাঠকরা হয়তো এই লিস্ট দেখে ভাবছেন,
কলেজে কি ইংরেজি প্রভাষক নেই! হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। তিনি হচ্ছেন প্রিয় জামাল স্যার (অস্থায়ী)। যিনি স্থায়ী ছিলেন তিনি এখন প্রবাসে, কিছু দিনের জন্য দুবাই গেছেন কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে। স্যার অল্পদিন পরই ফিরে আসবেন উনার প্রিয় ক্যাম্পাসে।
এসব তরুণ শিক্ষরাই আমাদের আশার জায়গা ও ভরসাস্থল।
এছাড়া আরো আছেন সর্বদা পরোপকারী মর্তুজ ভাই, সদাহাস্যমুখ ছমিরণ দা, বোনের মত অঞ্জনা দিদি ও জয়া দিদি। অসময়ে পাশে দাঁড়ানো জাহাঙ্গীর ভাই ও রতীশ দা'র মত লোক। দিনরাত যে মানুষটি কলেজ পাহারা দেন, তিনিও তো আমাদের প্রিয় রবিউল আউয়াল চাচা।
আমার প্রিয় কলেজ ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছে; কয়েকদিন বা মাসখানেক পর এমপিওভূক্তও হবে।
নিন্দুকেরা শুনে রাখুন, 'আপনাদের সমালোচনা আমরা ভয় পাই না। আমরা চলছি ও চলব আমাদের নিজস্ব ধারায়।
কলেজ এগিয়ে চলছে এবং এগুবেই।
বঙ্গবন্ধু যেমন ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, 'আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না; ঠিক এই একবিংশ শতাব্দীতে আমিও প্রকাশ্যে জোরগলায় বলতে চাই, আইডিয়েল কলেজকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।'

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ মামুন আমিন

অভ্র আজহার,
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অত্র কলেজ।
বানিয়াচং, হবিগঞ্জ।
১১/০৫/২০১৬ইং, বুধ
বার।

0 comments:

Post a Comment