Sunday, May 29, 2016

চে গুয়েভারার ছবি সম্বলিত টি-শার্ট ও পরিধানকারী যুব সমাজ



আর্নেস্তা চে গুয়েভারা। যিনি চে নামেই পরিচিত। ১৯২৮ সালের ১৪ই জুন তিনি আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহন করেন। চে গুয়েভারা চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশুনা করেছেন। একাধারে তিনি একজন চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, লেখক ও গেরিলা লিডার হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছেন। যখন তিনি মেডিকেলের ছাত্র তখন তিনি লাতিন আমেরিকায় পাড়ি জমান। তিনি লাতিন আমেরিকায় গিয়ে অনুধাবন করলেন যে আমেরিকার বেশির ভাগ দেশই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শোষণে পিষ্ঠ ও মুক্তির আকাঙ্খায় উদ্বেল। মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখার জন্য বেড়িয়ে পড়েন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে। একমাত্র পরিবহন ছিল মোটর সাইকেল। মোটর সাইকেল ভ্রমনে তিনি দেখলেন মানুষের দুঃখ-দুর্দশার অন- নেই। বিপন্ন মানবতা সাম্রাজ্যবাদের বিভৎস রূপ। তখন এসব অন্যয়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পরেন। মেক্সিকোতে ফিদেল কেস্ত্রোর সাথে দেখা করেন। দু'জনের মধ্যে সখ্যতা ও বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। তখন উনারা (চে ও ফিদেল কাস্ত্রো) মিলে ঠিক করলেন কিউবায় বিপ্লব দিয়েই শুরু করবেন তদের যাত্রা। অবশেষে ১৯৫৮ সালে কিউবায় বিপ্লব সফল হল। তখন শুরু হল কিউবা পুনঃগঠনের কাজ। চে আরেকটি বিপ্লব সফল করার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। তখন বিপ্লব সফল করার জন্য পাড়ি জমান বলিভিয়ার উদ্দেশ্যে। সংগ্রাম শুরু করলেন। গেরিলা যুদ্ধের রূপকাঠি প্রনয়ন করলেন কিন’ সেবার বলিভিয়ার সৈন্যরা তাকে সফল হতে দেয়নি। গেরিলা যুদ্ধের এক পর্যায়ে শত্রু সেনারা তাকে বন্দি করে। এক পর্যায়ে বন্দি রাখা অবস্থায় চে গুয়েভারাকে ৯ অক্টোবর হত্যা করে।
চে বিত্তশালী পরিবারের সন্তান এবং সামজে সু-প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও নিজের একা বিলাশবহুল জীবনযাপনের চিন্তা না করে সমাজের সকল মানুষের সাচ্ছন্দপূর্ণ জীবনের চিন্তা করেছেন। সেজন্য তিনি বিপ্লবী হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করে কিউবার মত একটি দেশে বিপ্লব সফল করে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে পেরেছিলেন। সেই সরকারের মন্ত্রীসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বও পেয়েছিলেন। কিন’ মন্ত্রীত্বে বহাল রেখে তিনি শুধু সেদেশের মানুষকেই সুখী জীবনের অধিকারী করে ক্ষান- থাকার মত লোক ছিলেন না। সমগ্র বিশ্বের মানুষের মধ্যে সেই সুখ তিনি ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেজন্য তিনি মন্ত্রীত্ব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ বলিভিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন’ শত্রু বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে জীবন দেয়ায় বিশ্ববাসীকে সমাজতন্ত্রের সুখসুধা পান করার স্বপ্ন পুরণ করে যেতে পারেননি। শত্রু বাহিনী চে এর মত একজন মহান বিপ্লবীকে হত্যা করতে পারলেও তার সমাজতান্ত্রিক চিন্তা বা মহৎ স্বপ্নকে হত্যা করতে পারেনি। সেজন্য তার মৃত্যুর এত বছর পরও তার স্বপ্নকে লালন করে ল্যাতিন আমেরিকার মানুষ জেগে উঠেছে। চে শুধুমাত্র একটি দেশ কিউবাকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু’ আজ বলিভিয়া, ভ্যানিজুয়েলা, চিলিসহ ল্যতিন আমেরিকার প্রায় সব ক’টি দেশের মানুষ সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছে।
সমাজতন্ত্রের এ অগ্রযাত্রার সাথে সাথে বিপ্লবী চে গুয়েভারার নামটিও বর্তমান বিশ্বে বহুলভাবে আলোচিত হচ্ছে। পোশাক-পরিচ্ছদে চে এর ছবি শোভা পাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নেই। বাংলাদেশের যে কিশোর-যুবক চে সম্পর্কে ভালভাবে কোনকিছু জানেনা তাকে বা তার মত অনেককেই চে এর ছবি সম্বলিত টি-শার্ট পড়ে ঘুরতে দেখা যায়। বুকে ছবি ধারণ করতে করতে হয়তো একদিন এই কিশোর-যুবসমাজ চে গুয়েভারার রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা শুরু করবে এবং নিজেরা হয়ে উঠবে একেক জন চে। এভাবেই একদিন বাংলাদেশ হয়ে উঠবে কিউবার মত সুখী-সমৃদ্ধ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই প্রত্যাশায় চে গুয়েভারাকে লাল সালাম।

প্রকাশকালঃ ০৯/১০/২০১২, দৈনিক স্বদেশ বার্তা।

লেখক: আজহার উদ্দিন শিমুল
ব্লগার এণ্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট।

0 comments:

Post a Comment